ভিন্নরকম রমজান

যুদ্ধের মধ্যেই রমজানকে স্বাগত জানাবেন ফিলিস্তিনিরা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ১৩:১৫ |  আপডেট  : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:২৯

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যুদ্ধের ভীতি ও অনাহারের মধ্যেই নিরানন্দ মনোভাবে রোজা রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। স্বাভাবিক অবস্থায় পবিত্র রমজান মাসে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনও চুক্তি না হওয়ায় এবারের রমজান মাস যুদ্ধের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনের মানুষদের। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। 

গাজায় বাস্তুচ্যুত নেহাদ এল-জেদ বলেছেন, প্রতি বছরের মতো এবারের পরিস্থিতি না হলেও রমজান একটি আশীর্বাদের মাস। কিন্তু আমরা অটল ও ধৈর্য ধরছি। আমরা স্বাভাবিকভাবে রমজানকে স্বাগত জানাবো। 

এদিকে ইসলামের একটি পবিত্রতম স্থান জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। রমজানে প্রতি দিন লাখ লাখ মুসল্লি মসজিদে নামাজে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বিরোধে গুরুত্বপূর্ণ আল আকসা মসজিদ। স্থানটি ইহুদিদের কাছেও পবিত্র। তারা এটিকে টেম্পল মাউন্ট বলে অভিহিত করে।

আল আকসা মসজিদ

২০২১ সালে ইসরায়েল ও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মসজিদটি। ওই সময় দশ দিনের যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ছয় মাসে গড়িয়েছে। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার পর এই আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে সেখানে দুর্ভিক্ষের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কায় সতর্কতা জানিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৩১ হাজার ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত এসব মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া হামলায় আরও ৭২ হাজার ৬৫৪ জন আহত হয়েছেন।

গত মাসে ইসরায়েলে কট্টরপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির বলেছিলেন, আল আকসায় মুসল্লিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ চান তিনি। যদিও পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, মুসল্লিদের সংখ্যা গত বছরের সমান সংখ্যায় থাকবে।

এদিকে আল আকসা মসজিদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জেরুজালেম ওয়াক্ফ এর মহা পরিচালক আজ্জাম আল-খাতিব বলেছেন, এটি আমাদের মসজিদ এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। এই মসজিদে মুসলিমদের উপস্থিতি আমাদের সুরক্ষিত করতে হবে। মসজিদে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদে বিপুল সংখ্যক মুসল্লির প্রবেশ করতে পারা উচিত। 

এবার রমজানে আগের বছরগুলোর তুলনায় বিপরীত চিত্র পশ্চিম তীরেও। সচরাচর রমজানের শুরুতে ওল্ড সিটিতে যে সাজ-সজ্জা থাকে, এবার তা করা হয়নি। দখলকৃত পশ্চিম তীরেও গাজার মতো নিরানন্দ আবহ। ওল্ড সিটির কমিউনিটি নেতা আম্মার সিডার বলেছেন, আমাদের শিশু ও বয়স্ক এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবার জেরুজালেমের পুরনো শহরে সাজ-সজ্জা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

রমজানের রাতে জেরুজালেমের পুরাতন শহরের রাস্তা-২০১১

ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, রমজানকে শান্তিপূর্ণ রাখতে তারা কাজ করছে এবং উসকানিমূলক পদক্ষেপ ঠেকাতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ থেকে শুরু করে ক্র্যাকডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রেখে রমজানের নামাজ পড়তে অনুমতি দেওয়া হবে। 

মুসলিম বিশ্বের কাছে আল আকসায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ তিক্ত বিষয়গুলোর একটি। গত মাসে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ রমজানের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের আল আকসা মসজিদ অভিমুখে মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বছর ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদের ভেতরে প্রবেশের পর সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সময় সৌদি আরবসহ আরব লিগ ঘটনাটির নিন্দা জানিয়েছিল। 

 

সা/ই 

 

 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত