মৃত্যুর আওয়াজ আসে - মনিকা মারইয়াম
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ | আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:০৮
মৃত্যুর আওয়াজ আসে
মনিকা মারইয়াম
---------------------------
দুঃখের উপাখ্যান ভেঙে প্রবল গর্জনে কাঁপছে রাজপথ
নিরীহ মানুষের শরীর বেয়ে নামছে স্বৈরতন্ত্রের অতল অগ্নি
আজ শোকার্ত জুলাই রুদ্ধশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছে গণহত্যার ময়দানে।
বুকের গভীরে গনগনে হাহাকার
ক্ষুধার্ত চোখে রক্তের রুদ্ধ আস্ফালন
অভিশপ্ত সময়ের চরাচর ভেঙে—
উড়ে যেতে পারছি না নিষিদ্ধ অন্ধকার থেকে।
এখানে ধোঁয়াটে কুয়াশায় জর্জরিত কান্না
এখানে বেনামী অস্ত্রের সীমালঙ্ঘিত উল্লাস
এখানে অঙ্কিত হয়েছে মৃত্যুর নীলনকশা!
ঘুমহীন রাত; ঘুমহীন দিন
রোদ বৃষ্টি ঝড় তুফান মাথায় নিয়ে—
সহস্র কোটি মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে মিছিলে
আজ রাজপথে জ্বলছে মুক্তির মশাল!
ভীষণ উত্তাল জনসমুদ্র! ভীষণ উত্তাল শহর–নগর–গ্রাম
ঝলসে যাওয়া দীর্ঘ মিছিলে শোকের বিগলিত অশ্রু
আততায়ী ডাকাতের গুলিতে ভারী হচ্ছে লাশের কফিন
আর বিধ্বস্ত মানচিত্রের পাঁজর জুড়ে তাজা রক্তের ঢেউ।
ঋণগ্রস্থ জীবনে আমাদের কোন স্বস্তি নেই
কেবল মৃত ঈগলের চোখে চোখ রেখে—
নির্বাক তাকিয়ে আছি প্রত্নপাথরের মতো
আর অস্থির পুঁজিবাদী ঈশ্বরকে পিছনে ফেলে
পথে দাঁড়িয়েছি বুকের ভিতর রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে।
অতঃপর নিলামে ওঠা বিবস্ত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে
আমরা বারবার মরে যাই অবৈধ বুলেটের আঘাতে
উত্তরাধিকার সূত্রে মরে যায়— কমরেড আবু সাঈদ
মরে যায় মীর মুগ্ধ, কিশোরী নায়মা
কিংবা কাদামাটির জলে খেলতে থাকা সদ্য প্রস্ফুটিত শিশুদল!
আটপৌরে সন্ধ্যা ঘুমিয়ে যায় কুয়াশাচ্ছন্ন নীল রাতের গভীরে
নৃশংস মৃত্যুর দাবানলে জেগে থাকে বেদনার্ত অসহায় চোখ
মৃত্যুর আওয়াজ আসে, মৃত্যুর আওয়াজ আসে
কেবল মৃত্যুর আওয়াজ আসে ওই গম্বুজ থেকে।
রাজকীয় দুঃখ
----------------------
তাতানো আগুনের বিষাক্ত চোখে পুড়ে গেছো
অগণিত প্রিজমের রঙিন আলোয় খুঁজি সেই মুখ
যে একদিন জ্বলে উঠেছিলো তুমুল বিরহের নীল কান্নায়
অতঃপর সন্ধ্যার পাঁজর খুলে হারিয়ে গেছে বেনামী অন্ধকারের গলিত গর্ভে।
অসময়ের শাসানো আঙুল থেকে মুছে যায় না প্রেমের স্মৃতি
গুপ্ত ঘাতকের মতো গা ঢাকা দিয়ে থাকে হৃদয়ের নামহীন শহরে
চিরকাল বয়ে বেড়াতে হয় এমন রাজকীয় দুঃখ
বয়ে বেড়াতে হয় প্রেমিকার চোখে সংগোপনে থাকা মেঘের নৃশংস বেদনা!
কাঠকয়লার আগুন ভরা জীবন নিয়ে স্থির হতে পারি না
আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় তোমার সাম্রাজ্যবাদী দস্যু প্রেম
ও মায়াবী হরিণ— দরদী কোমল ছায়া
তোমার নামে এখনো পুড়ে মরি প্রত্নপাথরের বুকে জমে থাকা গুপ্ত আগুনে।
অভিমানের বেদনাফুল
-----------------------------------
সেই কবে থেকে ঘুমাতে পারি না
কেবল ঘুমহীনতার শরীর জুড়ে আঙুল বুলাই
নিঃসঙ্গতার পিঠে হেলান দিয়ে প্রহর আঁকি
কেবল শিউলি ফোঁটা ভোরের দিকে তাকিয়ে রই নিষ্পলক।
এখনো কেমন কঠিনভাবে বেঁচে আছো হৃদয় জুড়ে
গোপনে মিশে আছো জন্মদাগের মানচিত্রে
এখনো তেমনই তৃষ্ণা জাগে চুলের গন্ধে মাতাল হবার
এখনো তেমনই আগুন জ্বলে— শরীর পুড়িয়ে ভষ্ম করার!
ক্রমশ পরাজিত হয়েছি তুমুল জ্বরের কাছে
আঘাতে আঘাতে প্রেমের পায়ে ঠেঁকেছে অভিমানী পালক
নীমিলিত চোখের নির্বাক ইশারায়—
ঝরছে কতো অচেনা নামহীন মেঘের বেদনাফুল
জানো না তুমি হেমলকে ভেজা সেই বিরহের কথা!
এই আমির চূড়ান্ত কোন মালিকানা নেই
রাতের সিঁথানে নেই আনন্দ-রঞ্জিত একদণ্ড সময়
কেবল বেনোজলে ভাসা সীমাহীন দুঃখ আছে
কিংবা স্বপ্নের আরশি-মহলে আছে এক স্পর্শহীন ছায়া।
নিরিবিলি দাঁড়িয়ে কাকে দেখাবো এই মোহন যাতনার দাগ
কে এতোটা করুণা-কাতর কুসুম-কোমল বুলাবে বুকে হাত
এই নির্জনতায় কেউ নেই কোথাও—
তাই শৈল-চন্দ্রিমায় জ্বালাবো নিজের আপন শ্মশান!
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত