মিরকাদিম পৌর মেয়রের বাসভবনে বিস্ফোরণের কোনো ক্লু মিলেনি ! তদন্তের স্বার্থে গোপনীয়তা- সিআইডি

  কাজী দীপু, মুন্সীগঞ্জ 

প্রকাশ: ৮ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪৩ |  আপডেট  : ২০ মে ২০২৪, ২১:৩৩

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুস সালামের রামগোপালপুরস্থ বাসভবনে ভয়াভহ বিস্ফোরণের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও ঘটনার কোন ক্লু উদ্বার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বুধবার দুপুরে নির্বাচনি বিরোধের জের ধরে কুচক্রী মহল তাকে মেরে ফেলার জন্য ব্যাগ ভর্তি বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটায়-এমন দাবী পৌর মেয়রের। 

গ্যাস লিকেজের কারনে বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এমন ধারনার কথা বলেন মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু ইউছুফ। যার সঙ্গে  ঘটনাস্থলের পরিবেশ, পৌর মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর বক্তব্যের সঙ্গে মিল নেই।  তবে সিআইডি পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে এবং জব্দকরা আলামত পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে  বিস্ফোরণের ক্লু উদ্বারের লক্ষ্যে।সিআইডির পুলিশ জানিয়েছে, শিগগিরই এই  বিস্ফোরণের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে। 

স্থানীয় থানা পুলিশ ও মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বক্তব্যে গরমিল রয়েছে বললেন আ’লীগ নেতাকর্মী ও রামগোপালপুর এলাকাবাসী। তারা বলেন, নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ-গোদনাইল আরএমএস ও গোদনাইল টিবিএসে কয়েকটি বাল্বে লিকেজ ধরা পড়লে ওই ত্রুটি সারাতে জরুরি ভিত্তিতে বাল্ব প্রতিস্থাপনের জন্য মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। এছাড়া পৌর মেয়রের বাসভবনের রান্নাঘরে চুলোর গ্যাস পাইপে লিকেজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, সরবরাহ বন্ধ থাকলে গ্যাস লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণ কিভাবে হবে। বিস্ফোরণের সময় ১৩ জন অগ্নিদ্বগ্ধ হওয়া, ভবনের একাধিক কক্ষের দড়জা-কপাট তছনছসহ বিভিন্ন কক্ষের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে চুরমার হওয়ার ঘটনা ছোট আকারের ঘটনা নয়।  

ঘটনার পর বেডরুমের দরজার সামনে থাকা যে লাল ব্যাগ থেকে বিস্ফোরণের হয়, ঢ়া পুলিশকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পৌর মেয়র হাজী সালাম বলেন,  প্রাননাশের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কুচক্রি মহল লাল ব্যাগ ভর্তি গানপাউডার বা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য তার বাসভবনের তৃতীয় তলার ডাইনিং রুম ও রান্নাঘর সংলগ্ন উত্তর প্রান্তের বেডরুমের দরজার সামনে রেখে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তাই এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দাখিল করার প্রক্রিয়া চলছে।  তিনি বলেন,  অভিযোগে কারো নাম উল্লেখ না করে  অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইডির পুলিশ সুপার (বিশেষ) নাছিমা আক্তার বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, বিস্ফোরণস্থল ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শণকালে বেশ কিছু আলামত জব্দ করেছে সিআইডির অপরাধ শাখার বোমা বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা। বর্তমানে জব্দকৃত আলামত পরিক্ষা-নিরিক্ষা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে সিআইডির পুলিশ সুপার (বিশেষ) নাছিমা আক্তার জানান, কি কারনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়, লাল ব্যাগের ভেতরে কি ছিল, মামলার তদন্তের স্বার্থে গোপনীয়তার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। লাল ব্যাগের ভেতরে কি বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য ছিল এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পুলিশ সুপার হাস্যজ্জ্বল ভাবে এড়িয়ে যান।
 
উল্লেখ্য, বুধবার মিরকাদিম পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকায় এবং পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কাউন্সিলর দীন ইসলাম নিয়ে আসে।  মূলত এসব বিষয় নিয়ে ৭ জন কাউন্সিলর, পৌরসভার কর্মকর্তা, প্রকৌশলীদের নিয়ে বাসভবনের তৃতীয় তলার উত্তর প্রান্তের বেডরুমে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠক চলাকালে কক্ষের দরজার সামনে ব্যাগের ভিতরে আকস্মিক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে আগুন ধরে যাওয়াসহ ভবনের একাধিক কক্ষের দড়জা-কপাট তছনছ হয়ে যায়। এমনকি বিভিন্ন কক্ষের জানালার কাঁচ, দড়জা-কপাট ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে কাগজের মতো উড়ে যায়। ব্যাগের ভিতর শক্তিশালী কিছু থাকার কারনেই বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ১৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়।  এর মধ্যে অগ্নিদ্বগ্ধ ১২ জন ঢাকায় বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তাদের অনেকেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে পুড়ে জ্বলসে গেছে। এর মধ্যে  অগ্নিদগ্ধ মেয়রের স্ত্রী কানন বালার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে আইসিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত