সরকারের মহতি উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা   

মাদারীপুরে ‘চায়না দোয়াইর এর দৌরাত্ম, হুমকির মুখে মৎস্য সম্পদ 

  শফিক স্বপন  মাদারীপুর

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৪৭ |  আপডেট  : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৫

মাদারীপুরের নদ-নদী, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ‘চায়না দোয়াইর’ নামে এক প্রকার ঘন জালে সয়লাব হয়ে গেছে। জলাশয়ে এই বিশেষ ধরণের জাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করছে জেলে ও মৎস্য শিকারীরা। এই জালে ধরা পড়ছে সব ধরণের ছোট-বড় মাছ ও   ক্ষুদ্র  ক্ষুদ্র মাছের পোনা। ফলে বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়ছে মৎস্য সম্পদ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে একেবারে মৎস্য শূণ্য হয়ে পড়বে জেলার মৎস্য ভান্ডার। কর্তৃপ¶ মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ‘চায়না দোয়াইর’ জব্দ ও অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও থামছে জেলে ও মৎস্য শিকারীদের দৌরাত্ম। এখনই ‘চায়না দোয়াইর’ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ না করা হলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসবে না।   

সংশি­ষ্ট সূত্র, নদীপাড়ের বাসিন্দা ও  জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ‘চায়না দোয়াইর’ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে অসাধু মৎস্য শিকারীরা। প্রায় ৬০ থেকে ৮০ ফুট লম্বা একেকটি চায়না দোয়ারি জালের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। লোহার ৪টি শিক দিয়ে খোঁপ-খোঁপ আকারে থাকে এই 'চায়না দোয়াইর'তে। অতি সূক্ষ ঘণ চায়না দোয়াইর জালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নদ-নদী, বিল-বাওর বা অন্যান্য জলাশয়ে মাটির সাথে লম্বা-লম্বিভাবে লেগে থাকে এবং দু'দিক থেকে মাছ ঢুকতে পারে। চায়না জালের এ ফাঁদে মাছ ধরতে মাছের কোন খাবার বা টোপ দিতে হয় না। ফলে চিরায়িত মাছ ধরার যেসব কৌশল দিয়ে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করে; তারা হতাশ এমন পদ্ধতিতে। সহজে মাছ ধরা পড়ে বলে এতে আয় বেশি, অন্যদিকে পরিশ্রমও কম। তবে গত কয়েক বছরে মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় সে পরিস্থিতি থেকে কিছুটা উন্নতি হলেও থেমে নেই নির্বিচারে মাছ শিকার। নদ-নদীতে থাকা মিঠা পানির সব ধরণের দেশি মাছ সূ² এই ‘চায়না দোয়ারি’ জালে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির এই প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই সর্বশেষ প্রযুক্তির চায়না দোয়ারি জালে নিধন করা হচ্ছে। এমনকি মাছের ডিমও ছেঁকে ওঠে এই চায়না দোয়ারি জাল থেকে। সেই সাথে কুচিয়া, ব্যাঙ, সাপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণিও মারা পড়ছে। এই পদ্ধতিতে মাছ শিকার অব্যাহত থাকলে মিঠা পানির দেশি মাছ দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের সর্বশেষ সংযোজন 'চায়না দোয়াইর' বা ঘন জাল। এখনই এর ব্যবহার বন্ধ না করা হলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসবে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।  

মাদারীপুর (সদর) সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তপন মজুমদার বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃক্সখলা রক্ষা  বাহিনীর সহযোগিতায় নিষিদ্ধ ‘চায়না দোয়াইর’র বিরুদ্ধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা,  মোবাইল কোর্ট ও অভিযান অব্যাহত আছে। কোনভাবেই নিষিদ্ধ চায়না দোয়াইর দিয়ে কাউকে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না।’

মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ‘অবৈধ ‘চায়না দোয়াইর’ বিল-বাওর, নদী-নালা, খাল ও মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকি স্বরূপ। জেলার সর্বত্র মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার স্থাপন, উদ্বুদ্ধকরণ সভা,  ১৭টি অভিযানে ২২২টি ‘চায়না দুয়াইর’ আটক ও বিনষ্ট করা হয়েছে। ১টি মামলা ও ১০হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। চায়না দোয়াইর দিয়ে মাছ শিকার একটা বেআইনি কাজ। এর বিরুদ্ধে জেলা ব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। কোনভাবেই নিষিদ্ধ ‘চায়না দোয়াইর’ দিয়ে মাছ ধরতে দেওয়া হবে না।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত