মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪০ | আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯
মাদারীপুরে কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে নিহত তিনজন ও আহত হয় বহু ছাত্র-জনতা। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার অভাবে শরীর থেকে গুলি বের করতে না পারায় আহতদের অনেকেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এদিকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আর কোন ফ্যাসিবাদ সরকারকে দেখতে চান না অন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতা।
আহত শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয় মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ধুলগ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র ও শহরের জজকোর্ট গোলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আকিব মাতুব্বর। তিনটি অপারেশন করানো হলেও এখনো ঠিক মতো চোখে দেখতে পায় না সে। এতে আকিবের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এদিকে পাশের মাদারীপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফাইয়েত ইসলাম অনাবিলের শরীরে এখনো রয়ে গেছে দেড় শতাধিক রাবার গুলি। অর্থাভাবে অনাবিলের পরিবার করাতে পারেনি সুচিকিৎসা, হয়নি অপারেশনও। প্রচন্ড ব্যথা আর যন্ত্রনায় দিন পার করছে বাণিজ্য বিভাগের মেধাবী এই শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, খাগদি, যুব ভবন, নতুন বাস টার্মিনাল জজকোর্ট, ইটেরপুল, ডিসি ব্রিজ, শিল্পকলা একাডেমি মোড়, শকুনি লেকেরপাড়সহ অন্তত ১২স্পটে ভাগ হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজার শিক্ষার্থী। আন্দোলনের নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শকুনি লেকে ডুবে মারা যায় দীপ্ত দে। গুলিতে মারা যায় তাওহীদ সন্ন্যামাত ও রোমান বেপারী নামে দুইজন। এছাড়া আহত হয় বহু শিক্ষার্থী। আহতদের সহযোগিতা ও নিহতদের রাস্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতির দাবি নিহতদের পরিবারের। দেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিবাদ সরকারকে দেখতে চান না অন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী, সমন্বয়ক ও এলাকাবাসী।
আহত শিক্ষার্থী আকিব মাতুব্বর বলেন, “আমরা মিলে সবাই প্রথমে ইউআই স্কুল মাঠে জড়ো হই, পরে ডিসিব্রিজ এলাকায় আসি। ছাত্রলীগ ও পুলিশ সদস্যরা আমাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে জজকোর্ট এলাকায় আন্দোলন করলে পুলিশের গুলিতে আমার চোখ নষ্ট হয়। চোখে গুলি ঢুকে যাওয়ায় রাজধানীর দুটি হাসপাতালে তিনটি অপারেশন করাতে হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন বছরে অন্তত ২বার পরীক্ষানিরীক্ষা ও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনদিন আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো না। এখন সরকারি সহযোগিতা ছাড়া স্থায়ী চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।” আহত শিক্ষার্থী সাফাইয়েত ইসলাম অনাবিল বলেন, “আমার শরীরে এখনো প্রায় দুইশো’ রাবার গুলি রয়েছে। অপারেশন করাতে প্রচুর টাকা দরকার। অর্থাভাবে সেটা করানো সম্ভব নয়। দিনে ও রাতে শরীরের প্রচন্ড ব্যথা করে। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, তাই উন্নত চিকিৎসাও করানো সম্ভব হয়নি। আমি বর্তমান সরকারের কাছে মিনতি করছি, আমাকে একটু উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য।” শহরের জজকোর্ট গোলাবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন মাতুব্বর বলেন, “সরকার বলছে যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, আমার ভাতিজা আকিবের সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক। তাহলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।” আহত শিক্ষার্থী সাফাইয়েত ইসলাম অনাবিলের চাচা শফিকুল ইসলাম সানু বলেন, “এই আন্দোলন আমরা নিজচোখে দেখেছি। আন্দোলনে এভাবে আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয় এটাই প্রত্যাশা করি। আর আমার ভাতিজা এখনো গুলির যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। তার সুচিকিৎসাও হয় নাই। আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় এমন অবস্থা তৈরী হয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।” কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্নামাতের মামা ইব্রাহীম খলিল বলেন, “তাওহীদ ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে মারা গেছে। মারা যাবার আগে ছাত্রলীগের সদস্যরা তাওহীদকে কুপিয়ে আহত করে। তাওহীদের নামে এলাকায় একটি স্মরণীয় স্থাপনা নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাওহীদের কথা মনে রাখতে পারে। এছাড়া রাস্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতির দাবিও জানাচ্ছি।”
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “মাদারীপুর জেলায় নিহত শহীদের প্রত্যেক পরিবারকে সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। হতাহতদের পরিবারের পাশে থাকবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া সরকারিভাবে আহত কেউ এখনো চাইলে চিকিৎসা নিতে পারবে। সে ব্যাপারে সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে, তিনি ফ্রিতে সব ধরণের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত