ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্বে থাকবে আওয়ামী লীগের আড়াই লাখ প্রশিক্ষিত কর্মী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:০৮ |  আপডেট  : ১৫ মে ২০২৪, ০২:৩৯

নির্বাচনে জামালপুরের আসনগুলোতে কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ওই জেলা শহরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইনের’ আওতায় গতকাল মঙ্গলবার এই প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রত্যেক নেতা–কর্মীকে ২০০ জন ভোটার কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। সে বিষয়েই প্রশিক্ষণে ৫৬৪ জন দলীয় নারী-পুরুষ কর্মী অংশ নেন।

সর্বশেষ গতকাল জামালপুরে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। শুধু জামালপুর নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৬ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১১৮টি আসনে কেন্দ্রে ভোটার আনার এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে ২ লাখ ২ হাজার ৫৮০ জন ভোট ‘প্রার্থনা’ কর্মী তৈরি হয়েছে। ভোট প্রার্থনা কর্মী বা প্রচারকর্মী তৈরি করতে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’ নামে একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর আওতায় সারা দেশে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষিত প্রচারকর্মী দিয়ে ভোটার এনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর চেষ্টা সরকারের রয়েছে। কিন্তু এটিকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যায় না। তিনি এ–ও বলেন, 
কেন্দ্রে ভোটার আনতে প্রশিক্ষণ দিয়ে লাখো কর্মী তৈরি করেই আওয়ামী লীগ থেমে নেই; নিচ্ছে নানা কৌশল। দলটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোয় জোর দিয়ে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়েছে। কারণ, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সামনে অন্যতম মূল চ্যালেঞ্জ এখন ভোটার উপস্থিতি।

আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির ব্যাপারে শঙ্কা আছে ক্ষমতাসীনদের। সে কারণে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা প্রচারকর্মীদের এখন কেন্দ্র পর্যন্ত ভোটার আনার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রচারকর্মী প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের ভোটকেন্দ্রে আনতে প্রশিক্ষণের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একটি আসনে যত ভোটার আছেন, তা ২০০ দিয়ে ভাগ করে মোট প্রচারকর্মী ঠিক করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তার মানে কোনো আসনে চার লাখ ভোটার থাকলে ক্যাম্পেইনার হবেন দুই হাজার।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো আরও জানাচ্ছে, ভোটের দিন প্রচারকর্মীদের ব্যাটারিচালিত গাড়ির পাশাপাশি নানারকম সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। সেসব সহায়তা কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসবেন তাঁরা। সারা দেশের কর্মীদের তথ্যসহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় একটি কল সেন্টার কাজ করছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানানো হয়েছে। সব ক্যাম্পেইনার এ অ্যাপ ব্যবহার করছেন। এখানে ভোটারদের সব তথ্য দেওয়া আছে। ভোটারের বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট সম্পন্ন করা পর্যন্ত ভোটারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখবেন প্রচারকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার এই প্রচারকর্মী তৈরির কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সারা দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৬ লাখ প্রচারকর্মী তৈরি করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, প্রত্যেক কর্মীর অধীনে ২০০ ভোটারের দায়িত্ব থাকবে। এতে সারা দেশের ১২ কোটি ভোটারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১৮টি আসনে প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।

এতে ২ লাখ ২ হাজার ৫৮০ জন প্রচারকর্মী তৈরি হয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আপাতত মন্থর হয়ে এসেছে। শুরুতে দিনে ২০টি আসনেও প্রশিক্ষণ চালানো হয়েছে। এখন দলীয় প্রার্থীদের অনুরোধের ভিত্তিতে তাঁদের নিজ নিজ আসনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে বড়জোর আর ১৫ থেকে ২০টি আসনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে। ঢাকার কোনো আসনে এখন পর্যন্ত কর্মী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।

নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, সময় কম থাকায় সব আসনে প্রশিক্ষিত প্রচারকর্মী তৈরি করা যায়নি। তবে শতাধিক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। তাই এসব আসনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হতে পারে। এর বাইরে যেসব আসনে ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে শঙ্কা আছে, সেখানে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সারা দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৬ লাখ প্রচারকর্মী তৈরি করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, প্রতে৵ক কর্মীর অধীনে ২০০ ভোটারের দায়িত্ব থাকবে। এতে সারা দেশের ১২ কোটি ভোটারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার এই প্রচারকর্মী তৈরির কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর এই অফলাইন ক্যাম্পেইন সমন্বয়ের জন্য ফোকাল পয়েন্ট হলেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর ও সহকারী ফোকাল পয়েন্ট হলেন সৈয়দ ইমাম বাকের।

সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর প্রথম আলোকে বলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করা হতে পারে। তাই ভোটারদের সঠিক তথ্য দিয়ে কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করতেই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই লাখের বেশি কর্মী তৈরি করা হয়েছে। বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য।
গত সেপ্টেম্বরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে সারা দেশের জন্য ১২টি দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দল গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পায়। এসব জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের থেকে বাছাই করে প্রচারকর্মীর তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর তাঁদের ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যাঁরা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যুক্ত, তাঁদের রাখা হয়েছে প্রশিক্ষকদের তালিকায়।

তবে প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে ভোটার বাড়ানো ক্ষমতাসীনদের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, কর্মী দিয়ে ভোটার আনার ক্ষেত্রে জোর করা বা ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ও আসতে পারে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রশিক্ষিত প্রচারকর্মী দিয়ে ভোটার এনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর চেষ্টা সরকারের রয়েছে। কিন্তু এটিকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যায় না। তিনি এ–ও বলেন, বাড়ি থেকে ভোটার আনার পরও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত