ভালোবাসা আর হতাশা নিয়ে সাংবাদিক দম্পতির কবরে শ্রদ্ধা পরিবারের

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:১৫ |  আপডেট  : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২০

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের এক দশক পূর্ণ হলো আজ শুক্রবার। ভালোবাসা, কষ্ট আর এক বুক হতাশা নিয়ে সাগর-রুনির কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাঁদের পরিবার। এই সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র ছেলে মেহের সারোয়ার মেঘ, রুনির ভাই নওশের আলমসহ পরিবারের সদস্যেরা আজ শুক্রবার সকালে আজিমপুর কবরস্থানে কবর জিয়ারত করেন।

এ সময় দোয়া পাঠ করে দুজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে স্বজনেরা। ফুল দিয়ে মা-বাবার কবরে শ্রদ্ধা জানায় তাঁদের সন্তান মেহের সারোয়ার মেঘ। গত ১০ বছরেও এই হত্যার বিচার না পেয়ে নিজেদের অসহায় মনে করেন সাংবাদিক রুনির ছোট ভাই মামলার বাদী নওশের আলম।

নওশের বলেন, ‘এতটুকু একটা বাচ্চা, যার ১৫ বছর হয়ে গেছে। ও বড় হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার মা-বাবার বিচারের যে প্রক্রিয়া, সব কিছু আগের মতোই, কোনো পরিবর্তন নাই, এটা হতাশাজনক। রাষ্ট্র যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে বিচার চাইতেও আমাদের এখন লজ্জা লাগে। বিচার পাই না, তাই বিচার চাই না—এমন জায়গায় এখন আমাদের চলে যেতে হবে।’

এ এক দশকে ৮৫ বারের মতো পিছিয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

এদিকে, মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পরীক্ষা করে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দুজন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পরীক্ষা করে শনাক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এখন মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রে ফরেনসিক ও ডিএনএ টেস্টের নামে ঝুলে আছে। ছয় বছর আগে সেখানকার দুটি বেসরকারি ল্যাবে এ টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দ্রুত হত্যাকারী খুঁজে বের করার কথা বলেছিলেন। আর, তখনকার পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার খুনি চিহ্নিত হয়েছে বলেই নিশ্চিত করেছিলেন।

কিন্তু, বাস্তবে এ মামলার ন্যূনতম অগ্রগতিও দেখতে পায়নি দেশবাসী। এমন মামলা হয়তো খুঁজে পাওয়াই কঠিন যে, দীর্ঘ ১০ বছরেও এর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া যায়নি। শুধু সময় পেছানোর মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আমরা অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করেছি এবং প্রায় দেড় শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছি।  এ ছাড়া ইউএসএ-তে ডিএনএ পরীক্ষা করেছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও কাজ অব্যাহত রয়েছে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখছি না।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ঢাকা মহানগরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে এবং আমাদের প্রসিকিউশনের পক্ষেও সদিচ্ছা আছে যে, মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে আসুক।’

অন্যদিকে, মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলমের অভিযোগ—তদন্ত সংস্থার আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, এ কারণে মামলার অগ্রগতি নেই।

নওশের বলেন, ‘অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এ মামলার বিচারের ব্যাপারে। বিচার দেওয়া নিয়ে আসলে আমাদের সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে, এমন একটা ব্যাপার। যাচ্ছেতাইভাবে প্রহসন করা হচ্ছে।’

এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না দেখেই চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মারা গেছেন মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা। নিহত সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে সব কিছুই করতে পারে। আমি জীবদ্দশায় (বিচার) দেখে যেতে চাই। রুনির মা তো পারেনি, আমি দেখে যেতে চাই, ছেলের কবরটা জিয়ারত করতে চাই।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের বাদী হয়ে রাজধানীর শেরে বাংলানগর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আট জনকে আটক করা হয়। বাকিরা হলেন—রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর রহমান, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির। এর মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন।

তদন্তের হালচাল

সাগর-রুনি হত্যা মামলাটির তদন্তভার প্রথমে পায় শেরে বাংলানগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলাম। এরপর ২০১২ সালের ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্ত শুরু করেন। হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র‍্যাবের কাছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১৯ এপ্রিল র‍্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। র‍্যাবের এ তদন্ত কর্মকর্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার কারণে ২০১৪ সালের ১২ মার্চ তদন্তভার পান র‍্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া।

এরপর র‍্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মেদ ২০১৫ সালে তদন্তভার গ্রহণ করেন। সর্বশেষ মামলাটি র‍্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম তদন্ত করছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত