ভারতে আটক‘ ট্রলার শ্রমিক জেলেদের মুক্তি ও জেলেদের সহায়তা প্রকল্পে লুটপাট বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:২৫ | আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি ও বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ১৪ মার্চ ২০২৩ইং মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “ভারতে আটক জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনা, মৃত জেলেদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও জেলেদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে লুটপাট বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল” অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু মৎস্য ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা এদেশের দরিদ্র মৎস্যজীবী ও ট্রলার শ্রমিকরা দেশের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও সাগর ও নদীতে মৎস্য আহরণ করি। গত ১৯ আগষ্ট ২০২২ ও ২১ নভেম্বর ২০২২ দুটি প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা হয়ে গেল। এতে শতাধিক জেলে প্রাণ হারিয়েছে এবং শতশত ট্রলার নিখোঁজ হয়েছে। প্রায় ১৩৫ জন মৎস্যজীবী ও ট্রলার শ্রমিক ১৮—১৯ ঘন্টা সাঁতার কেটে ভারতীয় জলসীমায় পৌঁছালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে বিভিন্ন কারাগারে রাখে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০—১৫ খানা আবেদন করেছি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে ১২০ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো ১৮ জন উড়িষ্যার কারাগারে আটক রয়েছে। তাদের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিসেম্বর ২০২২ পত্র দিয়েছি। কিন্তু দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশনের অবহেলার কারণে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে ১৮ জন জেলে এখনো মুক্তি পায় নাই।
তারা বলেন, গত ১৯ আগস্ট ও ২১ নভেম্বর ২০২২ প্রলয়ংকারী বন্যায় যে সমস্ত জেলে মারা গেছে তাদের পরিবার পরিজনকে সরকার বা কোন সংস্থা কোন সাহায্য সহযোগিতা করে নাই। সরকারের মৎস্য বিভাগ জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প চালু করেছে। সে প্রকল্পগুলোর সাহায্য প্রকৃত জেলেরা পায় নাই কতিপয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ, জাল, গরু, হাঁস—মুরগি এগুলো জেলেদের দেবার কথা কিন্তু প্রকৃত জেলো পায় নাই। এগুলো পায় চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের আত্মীয়—স্বজনরা। জেলেদের ৪ মাসের খাদ্য সহায়তা ও ৬৫ দিনের ইলিশ রক্ষার খাদ্য সহায়তা শুধু চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। দেশের প্রায় সব ইউনিয়নে একই চিত্র। আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
বক্তারা আরো বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে অপেক্ষা করেছি যে সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠান কোন সহযোগিতা দেয় কিনা। কিন্তু গত ৪ মাসে কোন প্রতিষ্ঠান মৃত জেলে শ্রমিকদের পরিবার—পরিজনকে ১ কেজি চাল দিয়েও সাহায্য করেনি। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাথে দেখাও করে না। গত ৪ মাসে ভারতে আটক শ্রমিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশে আনতে পেরেছি। এখনো ১৮ জন ভারতের উরিষ্যার কারাগারে আটক রয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার সঠিক তদন্ত করে যাদের কারণে এতগুলো লোক মারা গেলো তদন্তু করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তা না হলে এ সংগঠন রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
নিম্নে সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু দাবি পেশ করা হলো—
১) বিগত দিন থেকে যে সকল মৎস্যজীবী জেলে তাদের ট্রলার সহ ভারতে আটক রয়েছে তাদের দেশে ফিরেয়ে আনতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২) মৎস্য বিভাগের সকল পর্যায়ের প্রকল্পে মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তভুর্ক্তি এবং জেলেদের ভিজিএফ বিতরণে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সকল নদীর মোহনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে।
৩) মৎস্যজীবী জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও চাকুরীর ব্যবস্থা করে সংখ্যা পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে ও মৎস্যজীবী জেলেদের এফআইডি কার্ড সংশোধনে মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মৎস্যজীবীদের জন্য মৎস্য ব্যাংক দিতে হবে।
৪) সাগর, নদী, হাওড়, মাছ চাষ, বিক্রি মৎস্যজীবীদের শ্রেনীবিভাজন করতে হবে ও মৎস্যজীবী জেলেদের নামে খাস ভূমি বরাদ্দ দিতে হবে। জলমহালের আয়তন ঠিক রেখে প্রকৃত মৎস্যজীবী জেলে সংগঠনের নামে বরাদ্দ দিতে হবে।
৫) মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে এফআইডি কার্ড ধারী জেলেদের সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণে ব্যবস্থা করতে হবে। সাগরে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের তালিকা নবায়ন করে সহায়তা দিতে হবে।
৬) সাগর, নদীতে মৎস্য আহরণে জলদস্যু ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে নিহত জেলে পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা, এফআইডি কার্ডধারী সকল জেলেদের নামে জীবন বীমা চালু করতে হবে।
৭) ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত মালামাল বন্টনের নামে লুটপাট বন্ধের লক্ষ্যে ট্রলার শ্রমিক প্রতিনিধি, নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগ ও শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধির সমস্বয়ে কমিটি গঠন করতে।
৮) গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ও বিডিন্ন উপকরণ জেলেদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে।
আগামী রমজানের পূর্বে ভারতের উড়িষ্যায় আটককৃত জেলেদের মুক্তি না হলে ২রা রমজান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রতিকী অনশনে বসে যাবো এবং জেলেদের খাদ্য সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ সঠিক ভাবে দেওয়া না হলে রমজানের পর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিতের সভাপতিত্বে মানববন্ধনের আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিকদার, শাহজাহান (লক্ষ্মীপুর), নজরুল হক (রংপুর), নুরুল ইসলাম (ভোলা), বাবুল মীর (বরিশাল), ধলা মাঝি (পটুয়াখালী), নাসির মেম্বার (লক্ষ্মীপুর), আবুল কালাম (কমলনগর), আশরাফ আলী (কক্সবাজার), আবুল খায়ের (পিরোজপুর), রফিক মিয়া (ঝালকাঠি), বাহারুল মাঝি (ঝালকাঠি), দেলোয়ার (বরগুনা), মামুন মিয়া (ভোলা), নাসির মহাজন (মনপুরা), ডা. আলী আশরাফ (সাতক্ষীরা) প্রমুখ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত