ভাঙ্গা পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং তাদের সংগ্রামী জীবন
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১০:২১ | আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২৩:০৪
মুজিব রহমান
---------------
বারাক হুসাইন ওবামার জন্য জীবন গড়া কঠিনই ছিল। তাঁর আফ্রিকান মুসলিম কৃষ্ণাঙ্গ পিতা ছেড়ে গিয়েছিল শ্বেতাঙ্গ খৃস্টান মাতাকে। মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া সন্তান হয় কৃষ্ণাঙ্গ। মায়ের শ্বেতাঙ্গ পরিবারেই বেড়ে উঠে কৃষ্ণাঙ্গ ওবামা। মাকেও নিয়মিত কাছে পায়নি।সবখানেই ভিন্নতা, প্রতিবন্ধকতা! সেই ওবামাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন দুবার।
কমলা হ্যারিসের জীবন আরো কঠিন ছিল। ভারত থেকে তার হিন্দু মা পড়তে গিয়েছিল আমেরিকায়। দুটি কন্যা কমলা ও মায়ার জন্মের পরেই খৃস্টান স্বামী আলাদা হয়ে যায়। আমেরিকায় নিজে কাজ করে দুটি শিশু কন্যাকে মানুষ করতে পারবে? নাকি কন্যারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে শেষ হয়ে যাবে? কমলা হ্যারিস আজ আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট আর তার বোন মায়া হ্যারিসেরও রয়েছে সমৃদ্ধ জীবন।
স্টিভ পল জবসের জীবন ছিল আরো কঠিন। তার সিরিয়ার মুসলিম পিতা ও খৃস্টান মাতা দুজনেই ছিলেন ছাত্রী। প্রেম ও শারিরীক সম্পর্কের জেরে বিয়ের আগেই জন্ম নেয় সন্তান। আমাদের ভাষায় জারজ সন্তান! অনাকাংঙ্ক্ষিত সেই সন্তানকে জন্মের পরেই তুলে দেন পালক পিতা-মাতার হাতে। সেই পিতা-মাতারও আর্থিক সঙ্গতি বেশি ছিল না। পরে স্টিভের প্রকৃত পিতা মাতার সম্পর্কেরও ইতি ঘটে। স্টিভ ছিলেন অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা যিনি কম্পিউটারের দুনিয়া পাল্টে দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালে বিস্ময় লাগে। ওখানকার রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে কেন পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া মানুষেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ, মানিক, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব, সুনীল, শীর্ষেন্দু, … অসংখ্য নাম, বিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বসু, অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, রাজনীতিতে জ্যোতিবসু, বুদ্ধদেব বসু, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, মমতা ব্যানার্জি, ত্রিপুরার মানিক, বিপ্লব এবং আরো আগের সরোজিনী নাইডু, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ বোস … অসংখ্য নাম। বাস্তবিক বাস্তুচ্যুৎ মানুষকে অধিক সংগ্রাম করতে হয় বাঁচার জন্য। পূর্ব বাংলা/ পূর্বপাকিস্তান/ বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে/ভারতে যাওয়া হিন্দুদের সীমাহীন কষ্ট করতে হয়েছে। সেই সংগ্রামী জীবনই হয়তো তাদের কাউকে কাউকে এগিয়ে দিয়েছে।
ইহুদীদের দিকে তাকালেও অবাক হতে হয়। তারা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ও সম্মানিত মানুষে পরিণত হয়েছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের ধারেকাছেও কোন জাতি নেই। অথচ খৃস্টান আধিপত্যবাদ শুরু হলে বিশ্বব্যাপীই তারা চূড়ান্তভাবে নিগৃহিত হতে থাকেন। ইসলাম আসার পরে তারা নিপীড়নের শিকার হন আরবেও। নিন্দিত, অপমানিত, নিপীড়িত হতে হতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পার করেছেন দৌড়ের উপর। অতিরিক্ত চাপে ধর্মও ছেড়েছে বহু ইহুদী। শহর থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, দেশ ছাড়তে হয়েছে দলে দলে। সেই সংগ্রামী জীবনই কি এগিয়ে দিয়েছে তাদের? বিকশিত হয়েছে তাদের মেধার! অথচ আরব মুসলিম-বিশ্বে আজ এতো সম্পদ কিন্তু একজন সম্মানিত মেধাবি মানুষের জন্ম হয় না।
ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানরাও অধিক সংগ্রামী হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা নিগৃহিত ও নিপীড়িত হয়। অনেক সময়েই পাশে কেউ থাকে না। অনেকেই নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। নেশার জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে অথবা নিজেকে একা টেনে নিতে পারে না সমৃদ্ধির পথে অর্থাৎ ব্যর্থ হয়। কিন্তু কিছু মানুষ সংগ্রাম করতে শিখে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে এবং নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকে অবিরাম। জীবনের শুরুতে শিখে যায়- নিজেরটা নিজেরই করতে হবে, সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে হবে। তাদের কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। তারাই হয়ে উঠেন একেকজন ওবামা, কমলা, জবস …।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত