বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৯:৩৪ | আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৩
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী আজ (১০ আগস্ট)। দিনটি পালন উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতান নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজমিস্ত্রি বাবা মেছের আলীর সন্তান লাল মিঞার (সুলতান) মাঝে শৈশবেই চিত্রাঙ্কনের প্রতিভা দেখা যায়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে লাল মিঞা নড়াইলের তৎকালীন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের দৃষ্টিতে পড়েন। তিনি সুলতানকে কলকাতায় নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সমালোচক কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক সায়েদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। একাডেমিক যোগ্যতা বিচার না করেই ১৯৪১ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অষ্টম শ্রেণি পাস সুলতানকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান দখল করে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হন সুলতান। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেননি তিনি। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলেজ ছেড়ে কাশ্মিরের পাহাড়ি অঞ্চলে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস ও তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাঙ্কন শুরু করেন। পরে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরে বেরিয়ে পড়েন।
শিল্পী সুলতান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন এবং এসব দেশে প্রখ্যাত চিত্রকরদের সঙ্গে তার ছবি প্রদর্শিত হয়। ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে শিল্পী মাটির টানে দেশে ফিরে আসেন। তিনি নিজস্ব উদ্যোগে জন্মস্থান নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল ও ‘শিশুস্বর্গ’ নামে শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিশু-কিশোরপ্রেমী সুলতান ১৯৮০ সালে নিজ বাড়িতে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মাণকাজ। এছাড়া তিনি ১৯৯২ সালে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নামে দ্বিতল নৌকা নির্মাণ করেছিলেন। এ নৌকায় তিনি শিশুদের নিয়ে চিত্রানদীতে ভ্রমণ করতেন এবং নৌকায় বসেই তাদের চিত্রাঙ্কন শেখাতেন। সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি।
শিল্পী সুলতানের ছবি ভারতের সিমলা, পাকিস্তানের লাহোর, করাচি, নিউইয়র্ক, বোস্টন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।
চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতেন সুলতান। তার হাতে প্রায়ই বাঁশি দেখা যেত। পুষতেন সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি। তিনি বাড়িতে একটি মিনি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিংস্র প্রাণীকেও তিনি বশে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা পান তিনি।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর চিরকুমার এই শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নড়াইলের নিজ বাড়ির আঙিনায় তাকে সমাহিত করা হয়। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।
আজ (মঙ্গলবার) এই প্রখ্যাত শিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টায় কোরআনখানি, সকাল ৯টায় শিল্পীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সোয়া ৯টায় মিলাদ মাহফিল। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানালেন সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু। সুলতানের ৯৭তম জন্মজয়ন্তী যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান। এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় উপস্থিত থাকবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত