বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্তে জাতীয় পরামর্শক কমিটির উদ্বেগ!
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২১, ০৯:৫৫ | আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭
করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু যখন দেশে অতীতের রেকর্ড ভাঙছে তখন ঈদে মানুষের চলাচল ও কোরবানির পশু কেনাকাটার সুবিধার্থে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ যদিও করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের পক্ষে ছিলো না। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে এমন শঙ্কা কমিটির সদস্যদের।
পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানা গেছে। সোমবার রাতে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সভাপতি ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, লকডাউন শিথিলের এমন সিদ্ধান্তে তারা উদ্বিগ্ন৷
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সরকার। দেশব্যাপী বিধিনিষেধের পাশাপাশি এবার স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করে। তারপরও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়।
প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হলেও পরে তা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ার পর করোনা পরিস্থিতি কমছে না। উল্টো প্রাণহানি ও শনাক্তে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙছে প্রতিদিন।
এমন অবস্থার মধ্যেই চলমান বিধিনিষেধ ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হবে বলে সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিলের আট দিন খুলে দেয়া হবে গণপরিবহন ও মার্কেটও৷ যদিও বলা হয়েছে সবকিছু করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। গণপরিবহনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলবে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, শুরুতে সব ঠিকঠাক থাকলেও পরে আগের মতো অবস্থায় ফিরে যায়৷ মানা হয় না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যেদিন বিধিনিষেধ শিথিলের কথা জানানো হয় সেদিনও সর্বোচ্চ মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। প্রাণহানিও ঘটেছে ২২০ জনের। এমন অবস্থায় লকডাউন শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরামর্শক কমিটির সভাপতি।
ডা. সহিদুল্লা বলেন, বিধিনিষেধ শিথিলের এই সিদ্ধান্ত তাদের পরামর্শের উল্টো। তার আশঙ্কা এর ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, না। এটি তাদের পরামর্শের উল্টো।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এর ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। আমরা উদ্বিগ্ন।’
এদিকে পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে আমরা অবস্থান করছি তখন এটা কেমন সিদ্ধান্ত হলো বুঝি না।’
কিছুটা বিরক্তির সূরে তিনি বলেন, ‘এখন আর করোনা পরিস্থিতির খোঁজ না নিলেও চলবে।’
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে শিথিলতার বিষয়ে জানা গেছে, রমজানের ঈদে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় লাখ লাখ মানুষ ভিন্ন উপায়ে গ্রামের বাড়ি গেছেন৷ তাতে দুর্ভোগের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না। তাই এবার আগেভাগে গণপরিহন খুলে দিলে গত ঈদের মত পরিস্থিতি হবে না বলে মনে করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত