বাবা আদম (রঃ) মাজার ও দীঘিকে ঘিরে নাম করণ হয় আদমদীঘি 

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২, ১৬:৫৩ |  আপডেট  : ৯ মে ২০২৪, ১৮:৫২

বগুড়ার আদমদীঘি বাবা আদম [রঃ] মাজার ও দীঘির নাম করণে আদমদীঘি নাম করণ হয়। স্মৃতি বিজরিত এই মাজার ও মসজিদের শত ফুট মিনারের কাজ বেশকিছু দিন ধরে শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে শত ফুট মিনার নির্মাণ কাজের সপ্তম তলার ঢালাই কাজের উদ্বোধন করা হয়। মাজার ও মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাজার ও মিনার কমিটির সভাপতি থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ইমাম আল হেলাল জামালী সহ মুসল্লীবৃন্দ। 

মসজিদ ও মাজারের ইতিহাস প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, হযরত বাবা আদম [রঃ] এর পূর্ণ্য স্মৃতি বিজরিত এলাকা বগুড়া জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত আদমদীঘি উপজেলা। অতি প্রাচীন ও ইসলামী চিন্তাবিদদের মাজারে পরিপূণ্য এই আদমদীঘি। প্রায় ৩ লাখ লোক অধ্যুষিত এ উপজেলায় আয়তন ১৬৮.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে আদমদীঘি অ ল পৌন্ড্র রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এক অংশ হিসাবে বিবেচিত হতো। তৎসময় এ এলাকার নাম ছিল ‘খট্টাপরগনা’। প্রাগৌতিহাসিক যুগ থেকে এ অ লে পৌন্ড্র রাজ্যের প্রশাসকগন সহ মৌর্য গুপ্ত এবং গৌর শাসনাধিনে ছিল। অষ্টম শতাব্দির মাঝামাঝি সময় থেকে পাল রাজ্যের শাসনাধিনে আসে এবং তা একাদশ শতাব্দির পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আদমদীঘির নাম করণের পিছনে রয়েছে বিশাল কাহিনী। বগুড়ার মহাস্থান গড়ের সুলতান ইব্রাহিম বখলীর [রঃ] মুত্যুর পর ক্রমাš^য়ে ইসলাম প্রচার স্থিমিত হয়ে আসে। এসময় বিক্রমপুরের রাজা বল্লালসেন এই এলাকায় শাসন করতেন। তার শাসনামলে নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে খোরাসান থেকে বাবা আদম [রঃ] তার ১২ জন সহচর নিয়ে এইখানে আস্তানা গড়ে তোলেন। বাবা আদম [রঃ] এর ব্যবহার এতই ভাল ছিল যে অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। বাবা আদম [রঃ] হিন্দু ও মুসলমানদের নিকট খুব সম্মান পেতেন। সেই সময় পানির কষ্ট দেখে বাবা আদমের সমসসাময়িক নাটোরের বিখ্যাত রাণী ভবানী, বাবা আদমের অলৌকিক ক্ষমতাবলির উপর আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করে একাট দীঘি খনন পূর্বক এই সাধকের নামে উৎসর্গ করেন। এর কিছু দিন পর মাজারের উত্তরে আরও একটি দীঘি খনন করা হয়। এই দীঘি বাবা আদমের নামানুসারে পরবর্তী কালে এই স্থানের নাম হয় ”আদমদীঘি”। দীঘির উত্তর পার্শ্বে বাবা আদম [রঃ] এর মাজার ও একটি বিশাল মসজিদ ও মিনার নির্মানাধীন রয়েছে। বাবা আদম [রঃ] বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী [রঃ] এর শিষ্য ছিলেন। এছাড়া শিয়ালশন গ্রামের হযরত শাহ রেজা দরবেশের মাজার, শাহাপুরে দেওয়ান গাজী রহমানের মাজার, গোব্দিপুরে দেওয়ান চাচার মাজার, বশিপুরে দূর্লব বাবার মাজার সহ এ উপজেলায় বহু পীর কামেলের মাজার রয়েছে। কথিত রয়েছে রাজা বল্লাল সেনের অত্যাচারে সমুচিত জবাব দিতে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে বাবা আদম (রঃ) বিক্রমপুরের পার্শ্বে আস্তানা গড়ে তোলে। সেখানে হাজার হাজার মানুষকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা গ্রহন করান। গরু জবাই করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এমন সময় একটি পাখি এক টুকরো গরুর মাংস মুখে নিয়ে উড়ে এসে বল্লাল সেনের দেব মন্দিরের পার্শ্বে ফেলে দেয়। এ দৃশ্য দেখে রাজা বল্লাল সেন আর স্থির থাকতে পারেনি। বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে আহত হয়ে বাবা আদম ]রহঃ[ ফিরে এলেন আদমদীঘিতে। এর কিছুদিন পর তিনি এখানে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাকে কবর দেয়া হয় ওই দীঘির পাড়ে। এখানে গড়ে উঠেছে মসজিদ ও মাদরাসা। বাবা আদমের নামের সাথে দীঘির নাম যোগ করে নাম করন হয় আদমদীঘি। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত