বাগেরহাটের পোস্ট ই-সেন্টারগুলোর সেবা অকার্যকর, বাক্সবন্দি সরঞ্জামাদি
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:০৭ | আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২২
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ডাক বিভাগের অধিকাংশ পোস্ট ই-সেন্টারের সেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের দুয়ারে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে প্রতিটি পোস্ট-ই সেন্টারে ডাক বিভাগ কয়েক লাখ টাকার কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামাদি দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তা ব্যবহার না করায় এ সকল সরঞ্জামাদি অকেজো অবস্থায় বা·বন্দি হয়ে পড়ে আছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ পোস্ট-ই সেন্টারের ই-সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। অপরদিকে, পোস্ট ই-সেন্টার সংশ্লিষ্টরা কোন কোন সেন্টারের সেবারমান সন্তোষজনক দাবি করে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনি· সরঞ্জামাদি মেরামতের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৫টি শাখা পোস্ট অফিস ও পোস্ট ই-সেন্টারে একজন করে পোস্ট মাস্টার, পিয়ন, রানার ও উদ্যোক্তা রয়েছেন। এসব পোস্ট ই-সেন্টারে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষে ডাক বিভাগ কর্তৃক ৩ টি ল্যাপটপ, একটি লেজার প্রিন্টার, একটি রঙ্গিন প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি মডেম, একটি কিবোর্ড, মাউসসহ কয়েক লাখ টাকার সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। এ সেন্টারে সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন শিক্ষিত বেকার যুবককে উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন। তিনি এ সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের দুয়ারে সরকারের ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষেই এ সকল পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়। পোস্ট ই-সেন্টারের সেবার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রিন্টিং, কম্পিউটার কম্পোজ, ছবি প্রিণ্ট, স্ক্যানিং, ই-লার্নিং, ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইন্টারনেটে পরীক্ষা ফলাফল প্রিন্ট, চাকুরির আবেদন, কৃষি তথ্য প্রদান, দেশ-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলাসহ বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল সেবা প্রদান। উপজেলার খাসেরহাট, উমাজুড়ি, টেকেরবাজার, বাবুগঞ্জবাজার, পাটরপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পোস্ট ই-সেন্টার থেকে জানা গেছে, বেশীরভাগ সেন্টারেরই প্রকৃতপক্ষে কোন কার্যক্রম নেই। কোন কোন সেন্টারে নাম সর্বস্ব একটি সাইনবোর্ড দেখা গেছে। এ সকল সেন্টারে ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত সরঞ্জামগুলো ব্যবহার না করে বাক্সবন্দী করে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট পোস্টমাষ্টার ও উদ্যেক্তারা।
এ ব্যাপারে স্কুল শি¶ক মো. সাফায়েত হোসেন, সুরশাইলের মিঠু বিশ্বাস, বোয়ালিয়ার টিটব বিশ্বাস ও কুরমনির দেবাশিষ বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, বর্তমানে পোস্ট-ই সেন্টারের ই-সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তা ব্যবহার না করায় এ সকল সরঞ্জামাদি অকেজো অবস্থায় বা· বন্দি হয়ে পড়ে আছে। ফলে জনসাধারণ বি ত হচ্ছেন। ব্যহত হচ্ছে সরকারের মহতি এ উদ্দেশ্য।
খাসেরহাট বাজারের পোস্ট-ই সেন্টারের পোস্টমাষ্টার গিরিশ চন্দ্র অধিকারী ও বাবুগঞ্জ বাজারের ঝণ্টু অধিকারীসহ বেশ কয়েক জন বলেন, অধিকাংশ পোস্ট ই-সেন্টার গুলো প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় উদ্যোক্তারা ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত সরঞ্জামগুলো ব্যবহার তেমন কোন আয়-উপার্জন করতে পারছেন না। তাছাড়াও অধিকাংশ মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা মেরামতের কোন বরাদ্দ না থাকায় বাধ্য হয়ে বা·বন্দী করে রাখতে হচ্ছে। এসব উদ্যোক্তাকে প্রতি মাসে কিছু উপার্জনের টাকা সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নিকট জমা করতে হয়। তাছাড়া মূল্যবান এ সকল সরঞ্জাম রাখার মত নির্দিষ্ট কোন স্থান না থাকায় উদ্যোক্তাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে সরঞ্জাম গুলো বাক্সবন্দী করে রেখেছি। সেই সাথে আমরা নষ্ট কম্পিউটার ও ইলেকট্রনি· সরঞ্জামাদি মেরামতের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা পোস্টমাষ্টার বিপ্লব কান্তি হাওলাদার বলেন, এ সব কিছুর তদারকির দায়িত্ব আমার নয়। তদারকি করেন আইপিও স্যার।
বুধবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা পোস্ট অফিস পরিদর্শক (আইপিও) মো. রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৬৮ টি শাখা পোস্ট অফিসের পোস্ট ই-সেন্টার রয়েছে। এ সকল সেন্টারের বেশীর ভাগের সরঞ্জামাদি নষ্ট ও অকেজো হওয়ার তাঁরা সেবা দিতে পারছেন না। তবে অনেক পোস্ট ই-সেন্টারের সেবারমান সন্তোষজনক। উদ্যোক্তারা যাতে সঠিক ভাবে তাঁদের নির্ধারিত সেবা প্রদান করে সে জন্য নষ্ট ডিভাইস গুলো মেরামতের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি কোন বরাদ্দ নেই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত