বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী টাউন নওয়াপাড়া পান বাজার এখন বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত

  বাগেরহাট প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২১, ২০:৪০ |  আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:২৫

বাগেরহাটের ফকিরহাটের ঐতিহ্যবাহী টাউন নওয়াপাড়া পান বাজারের সকল চান্দিনা ভেঙ্গে চুরে তা এখন ব্যাবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ২০বছর যাবৎ বাজারটির কোন উন্নয়ন না হওয়ায় চান্দিনার মধ্যে কোন ক্রেতা বিক্রেতা ক্রয় বিক্রয় করতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাজারের পুরানো দিনের যে ঐতিহ্য তা এখন হারাতে বসেছে। সরকার বছরে প্রায় ১কোটি টাকার ইজারা প্রদান করলেও বাজারটি সংস্কারে তা ব্যায় করা হচ্ছে না। ফলে বাজারে আগত ক্রেতা বিক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে সীমাহীন বহুবিধ নানান সমস্যার মধ্যে । অতিদ্রুত দুইটি বাজারের সকল চান্দিনা মেরামত সহ বাজারটি উন্নয়ন করার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবী করেছেন।

জানা গেছে,বাগেরহাটের সর্ববৃহৎ টাউন নওয়াপাড়া (ঘোষের-হাট) পান বাজারটি জেলার শ্রেষ্ট পান বাজার হিসাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর সুপরিচিতি রয়েছে। তৎকালিন জমিদার শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ এই বাজারটি স্থাপন করেন। সেই সময়ে বাজারটির নাম ছিল টাউন নওয়াপাড়া ঘোষের হাট। বর্তমানে এটির নাম করণ করা হয়েছে টাউন নওয়াপাড়া পানের হাট। বাগেরহাট পিরোজপুর নাজিরপুর বিষ্ণুপুর যাত্রাপুর কার্ত্তিকদিয়া মানসা-বাহিরদিয়া পাগলা মাদারীপুর টেকেরহাট বাগেরহাট সদর রামপাল মংলা ও বটিয়াঘাটা সহ দুুরদুরান্ত থেকে শতশত পানচাষি ও ক্রেতারা এই পান বাজারে পান ক্রয় বিক্রয় করতে আসেন। এখানের পান বিদেশেও রপ্তানী হয়ে থাকে। সেই হিসাবে বাজারটির সুপরিচিতি চট্রগ্রাম ও রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত রয়েছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, এই বাজারটি মুলত দুই ভাগে বিভক্ত। বকুলতলায় রাস্তার উপর যেখানে পান ক্রয় বিক্রয় করা হয়, সেটি পান বাজার এবং রাস্তার অপর পার্শ্বে যেখানে কাঁচামালামাল তরিতরকারি ও মাছ মাংস অন্যান্য মালামাল বিক্রয় করা হয় সেটিকে কাঁচা বাজার হিসাবে পরিচিত রয়েছে। পান বাজারে পান ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ৪টি চান্দিনা রয়েছে। এই চারটি চান্দিনার মধ্যে ১টিতে বস্তিবাসি ও অন্যটি ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় জনৈক ব্যাক্তি তার পোতার উপর ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর বেধে কোন রকমের চা’পানের দোকান করে ব্যাবসা পরিচালনা করছে। অন্য যে দুইটি চান্দিনা রয়েছে, তার উপরের টিনের ছাউনী ঝাজরা ও চালের বাতা আড়া এবং পিলার সিমেন্ট হতে খসেখসে পড়ছে। শুধু তাই নয়, বড় যে চান্দিনাটি রয়েছে, সেই চান্দিনার একটি অংশ নীল সরবর দিঘির মধ্যে চলে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে চান্দিনাটি ভেঙ্গে পুকুরের মধ্যে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।এছাড়া এখানে কোন গভীর বা অগভীর নলকুপ নাই। একমাত্র পাবলিক টয়লেট তা ভেঙ্গেচুরে ব্যাবহারের অনুপযোগী। এই বাজারের বেশ কিছু সরকারী জায়গা ভুমিহীনরা দখল করে সেখানে বসবাস করছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে দখলকারীদের মধ্য হতে ৫জনকে পিলজংগ রোনখোলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু পল্লী-১ (আশ্রয়ন প্রকল্প) ঘর দিলেও সেখানে তারা যাচ্ছেনা। বাকিরা বাজারের জায়গায় ঝুপড়ি ঘর বেঁধে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।

অপরদিকে রাস্তার অপরপ্রান্তে অবস্থিত কাঁচা বাজারটির অবস্থা ঐ একই ধরনের। ঐ বাজারের তিনটি চান্দিনা ভয়াবহ অবস্থায় দাড়িয়ে রয়েছে। এর টিন সেড গুলিতে ঝাজরা হয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যে একটু বৃষ্টি হলেই তা বাইরে পড়ার আগেই চান্দিনায় পড়ে ভিজে দাড়াবার স্থান টুকু থাকছেনা। ৩টি চান্দিনার ১টি চান্দিনায় কিছু বিক্রেতা ঝুকি নিয়ে মাছ ক্রয় বিক্রয় করলেও বাকি দুইটি ব্যাবহারের অনুপযোগী। এর ১টি পরিত্যাক্ত থাকায় জনৈক ব্যাক্তি সেখানে গাড়ী রাখার গ্যারেজ বানিয়েছেন। অপরটি সম্পূর্ণ পরিত্যাক্ত।

এই বাজারে বেশ কিছু সরকারী জায়গা অবৈধ দখলকারীরা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছেন। যে কারনে বাজারটি সংকুচিত হয়ে অনেক দোকানদার রাস্তার পার্শ্বে (খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পার্শ্বে) ঝুকি নিয়ে ক্রয় বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। সব মিলে নানাবিধ সমস্যার কারনে এই টাউন নওয়াপাড়া পান বাজার (ঘোষের-হাট) এখন তার পুরাতন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সচেতন মহল উর্দ্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত