বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলা, আওয়ামী লীগ–পুলিশ সংঘর্ষ
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২১, ০৮:১১ | আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯
বরিশালে পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তুমুল সংঘর্ষ ও ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনের আনসার সদস্য ও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের মাঝে বাকবিতণ্ডা ও গুলির জেরে এই ঘটনা ঘটে।
বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে।
জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ শাখা বিকাল থেকে নগরীতে বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার অপসারণের কাজ করে আসছিল। সন্ধ্যার দিকে বরিশাল সদর উপজেলা চত্বরে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের যে ব্যানার আছে সেগুলো অপসারণ করতে গেলে নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে থাকা আনসার সদস্যদের সাথে সিটি করপোরেশনের সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তারা ফিরে যায়।
পরবর্তীতে, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আবার ফিরে এলে নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বেরিয়ে আসেন। তখন তাদের মাঝে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে ইউএনওর নির্দেশে তার বাসভবনের সামনে থাকা আনসার সদস্যরা গুলি ছুঁড়লে দুইজন আহত হয়।
এর প্রেক্ষিতে, সিটি মেয়রসহ আওয়ামীলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে শুরু করে। আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, আনসার সদস্যরা সিটি মেয়রকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে, পুলিশ নির্বিচারে সেখানকার আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে বেশকয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় পুলিশ টহল চলছে।
ইউএনও মুনিবু্র রহমান অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা আমাকে গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।
ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর তাঁরা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। লাঠিচার্জ করা হয়।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আবু বকর ও শরিফুল নামের দুই পুলিশ সদস্য। আরও আহত হয়েছেন ইউএনওর সরকারি বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য ফারুক হোসেন ও নাসির উদ্দিন নামে আরেকজন। তাঁদের সবাইকে পুলিশ হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলা ও সংঘর্ষের পর ঢাকা–বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত অভিযোগ করে বলেন, ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে। এতে অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বরিশালের কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের পর ইউএনওর নিরাপত্তায় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এরামুল হক বলেন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবন সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত