বরগুনায় উপজেলা শিবির সভাপতির উপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

  হিমাদ্রি শেখর কেশব, বরগুনা

প্রকাশ: ৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৫ |  আপডেট  : ৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৪

বরগুনার পাথরঘাটায় যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও উপজেলা শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরগুনা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় বরগুনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরগুনা জেলা শাখা আহুত সংবাদ সম্মেলনে বর্বরোচিত হামলার শিকার ছাত্র শিবির সভাপতি হাফেজ মোঃ রাকিব হাসানের পিতা-মাতাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা শাখার সভাপতি সুমন আবদুল্লাহ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় গত ১ জানুয়ারি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোহাম্মদ নাসির নামে এক যুবদল কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। উক্ত হত্যার ঘটনায় একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, মিডিয়া ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ভাষ্যমতে, যুবদল নেতার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি ছাত্র সংগঠনের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এ ঘটনার সাথে ছাত্রশিবির বা তার নেতা-কর্মীদের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রশিবিরকে এ ঘটনায় জড়ানোর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন , এই মিথ্যা অভিযোগের জের ধরে একদল সন্ত্রাসী ছাত্রশিবির পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মো: রাকিব হাসান ও তাঁর পরিবারের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। তার বয়স্ক মাকে আঘাত করাসহ অত্যন্ত নিকৃষ্ট ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাকিব হাসানের ওপর হামলা করা হয়, যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন, বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হামলা ও গালিগালাজের শিকার রাকিব হাসানের মা ও বাবা আমাদের মাঝে উপস্থিত রয়েছেন।

ছাত্রশিবিরের জেলা শাখার সভাপতি সুমন আবদুল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্থানীয় কিছু সংবাদ মাধ্যম ও বাংলাদেশের কিছু প্রসিদ্ধ সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকতার নীতিকে বিসর্জন দিয়ে, কোনো প্রকার তথ্য যাচাই-বাছাই এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলা ছাড়াই হত্যাকারীরা ছাত্রশিবিরের ছত্রছায়ায় আছে বা শিবিরের সাথে যুক্ত বলে মিথ্যা ও পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রচার করছে।এভাবে মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অপপ্রয়াস শুধু নিন্দনীয় নয় বরং এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরির উস্কানি দেয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এ দেশের ছাত্রসমাজের উন্নয়নে নিষ্ঠা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে। দীর্ঘ এই পথচলায় সংগঠনটি সর্বদা শান্তি, শিক্ষা এবং ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কখনোই হত্যা বা জুলুমের রাজনীতি সমর্থন করে না। সম্প্রতি সংগঠনকে জড়িয়ে যে ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের ওপর যে হামলা সংগঠিত হয়েছে, তা আমাদের চলমান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার একটি পরিকল্পিত অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতা হিসেবে প্রচার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তারা কোন ভিত্তিতে এই মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি, যারা আদর্শিকভাবে ছাত্রশিবিরকে মোকাবিলা করার সাহস রাখে না এবং যাদের নিজেদের কোনো শক্তিশালী আদর্শ নেই, তারা ছাত্রশিবিরকে ঘায়েল করতে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের ঘৃণ্য অপকৌশল গ্রহণ করে থাকে। ছাত্রশিবিরকে মিথ্যা প্রচারণা ও অপরাজনীতির মাধ্যমে ভিলেন সাজিয়ে সংগঠনের ওপর নির্যাতন ও জুলুম চালানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হতো। দুঃখজনকভাবে, আজও আমরা সেই একই ঘৃণ্য অপতৎপরতার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করছি।

এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রত্যাশা করি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, হত্যাকারী রাব্বি বা তার মতো অপরাধীদের সাথে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো ধরনের সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। বরং আমরা দেখেছি যে ৫ আগস্টের পরে তারা ছাত্রদল, যুবদলের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছে, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের সাথে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।

নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে যে দাবিসমূহ উত্থাপন করেন, নাসির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রকৃত পরিচয় ইতোমধ্যে উদঘাটিত হয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। যারা ঘটনার সাথে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়, তাদের ওপর রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নাসির হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধে, পরিকল্পিতভাবে যারা ছাত্রশিবিরের পাথরঘাটা থানা সভাপতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। মিথ্যা অপপ্রচারের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উভয় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি থেকে বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাকিব হাসানের পিতা মোঃ বাদল শিকদার, মাতা আমেনা বেগমসহ জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি হাসিবুর রহমান প্রমুখ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত