বগুড়া-৩ আসনে লাঙলের ঘুম হারাম করে দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৩ | আপডেট : ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৪১
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে ১৪ দলের সমঝোতার মাধ্যমে ছাড় পাওয়া এই আসনে তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম খান রাজুকে প্রত্যাহার করা হলেও এ আসনে জোরেশোরে ভোটের লড়াইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তার ছেলে খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধনসহ অন্যান্যরা। এর মধ্যে ‘লাঙল’ প্রতীকের প্রার্থী দুর্বল হওয়ায় আসনটি জাপার হাতছাড়া হওয়া প্রায় নিশ্চিত বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে। এ আসনে জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াই এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। ফলে লাঙলের ঘুম হারাম করে দিয়েছে ট্রাক মার্কা ও কাঁচি মার্কা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আসনটিতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে এই আসনে প্রার্থী সমর্থকদের পোস্টার ছেড়া ও মারপিটের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমানে এই আসনে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খান মোহাম্মাদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবছেন প্রার্থীরা। তিনি (ট্রাক) আর অজয় সরকার (কাঁচি) প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন। এছাড়া এই আসনে মোট ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ (ঈগল), বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী (বহিষ্কৃত) আফজাল হোসেন (ফুলকপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আফরিনা পারভীন (একতারা), তৃণমূল বিএনপির আব্দুল মোত্তালেব (সোনালী আঁশ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আব্দুল মালেক সরকার (মশাল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজ উদ্দীন মন্ডল (ডাব), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন রফিকুল ইসলাম সরদার (নোঙর) ও স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম (কেটলি)। এতগুলো প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত দুইবারের এমপি জাপার প্রার্থী নুরুল ইসলামের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
এদিকে গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় আদমদীঘি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনতা ব্যাংকের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় কুমার সরকারের কাঁচি মার্কার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ট্রাক মার্কার পোস্টার উপর পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে। ওই মারপিটে আহত হয় ট্রাক মার্কার বেশ কয়েকজন কর্মী। এতে উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী খান মোহাম্মাদ সাইফুল্লাহ আল বাঁধন বলেন, ২০ ডিসেম্বর উপজেলা সদরের জনতা ব্যাংক এলাকায় আমার পোস্টারের উপর কাঁচি মার্কার পোস্টার লাগাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমার লোকজন সেখানে গিয়ে তাদের শান্ত ভাবে বাধা প্রদান করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার কর্মীদের উপর চড়াও হয় এবং মারপিট শুরু করে।
কাঁচি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় কুমার সরকার বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাক সমর্থকরা আমার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও লাঙল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ‘গতবারের মতো দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ এবার আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না। বিশেষ করে আদমদীঘির নেতারা বিপক্ষে গেছেন। আমি চেষ্টা করছি, কিন্তু তারা কেউ যোগাযোগ করছে না। অথচ তাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি তাদের দলের সভানেত্রীর কথা অমান্য করে আমার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে তারা কাজ করছেন। কৌশলেও কোন সহযোগিতা করছেন না তারা।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা সকল অভিযোগ তদন্ত করছি। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত