খায় ভাত ও কলা

বগুড়ায় বাংলালিংক, ভারতী ও হিরো আলম হাট কাঁপিয়ে তুলছে

  কালাম আজাদ, বগুড়া থেকে

প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২২, ২০:২০ |  আপডেট  : ৪ মে ২০২৪, ০৩:২৬

মুসলমানদের ধর্মীয় দ্বিতীয় মহাউৎসব কোরবানীর ঈদ, ঈদুল আযহা। আর যতই দিন যাচ্ছে, ততই দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। এই কোরবানী ঈদের সখের পোষা পশু বাংলালিংক, ভারতী ও হিরো আলম ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে। আর এসব ষাড় এবার কোরবানী পুশর হাট কাপিয়ে তুলছে। এসব পশু জেলার মধ্যে একদিকে বড় এবং ওজনে বেশী, অন্যদিকে মানুষের, মোবাইল কোম্পানি ও দেশের নামের পশুর নাম দেওয়ায় বিশাল আকৃতির এসব ষাঁড়কে এক নজর দেখার জন্য উসুক জনতার ভীড় করছে। ষাঁড় বাংলালিংকের ১৫ লাখ, ভারতী ১০ এবং হিরো আলমের দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। এসব পশু হাটে না তুললেও খামারে আসছেন ক্রেতারা দেখছেন এবং দাম করছেন তারা। এসব ষাঁড়কে প্রাকৃতিক ভাবে দানাদার, লিকুইড, খৈল, গম, ভুষি, ভাত, ঘাস ও কলা খেয়ে এমন আকৃতির করেছেন দাবি করছেন খামারিরা।

কয়দিন পরই মুসলমানদের মহান ত্যাগের ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব কোরবানী ঈদে সারা দেশের মতো বগুড়া জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশী সংখ্য পশু খামারিরাও প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কোরবানীর ঈদের সবচেয়ে সখের ও বড় পশু লালন পালন করেছেন বগুড়ার খামারিরা। এসব খামারিদের মধ্যে জেলা গাবতলী উপজেলার নারুয়ামালার বাওইটোনা এলাকার খামারি ও ব্যাংকার জহুরুর ইসলাম জুয়েলের ১৫ শত কেজি ওজনের ষাঁড় পোষা নাম দেওয়া হয়েছে বাংলালিংক। প্রসবের পর দেখতে সুন্দর ও নাদুসনুদুস হওয়ায় শখের বশে নাম রাখা হয় ‘বাংলালিংক’ । গত সাড়ে চার বছরে ওজন হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কেজি।  এই বাংলালিংক ষাঁড়ের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে, শহরের রহমান নগর এলাকার আবেদীন ডেইরি খামারী আব্দুস সবুর বাবুর ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড়। আদর-সোহাগ করে নাম রেখেছেন ‘ভারতী’। ভারতীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দেওয়া হয় প্রাকৃতিক ভাবে দানাদার, লিকুইড, খৈল, গম, ভুষি, ভাত, ঘাস ও কলা। এ ছাড়া গরুটির প্রতিবার পানির প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৮০ লিটারের মতো। এই ভারতীর দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দামদাম করছেন বলে জানা গেছে করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন খামারী।

এছাড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যে পাড়া এলাকার যুবক জিয়াম হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা এবং গরু পালন করছেন। তার খামারিতে সখ করে বড় করেছেন লম্বায় ৮ ফুট, উচ্চতায় সাড়ে ৫ ফুট এবং ওজন ৯০০ কেজি। হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়। যার নাম দিয়েছেন ‘হিরো আলম’। কালো এবং সাদা রংয়ের ষাড়টি এবার কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি করা হবে। দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা

জেলার গাবতলী উপজেলার নাড়ুয়ামালা ইউনিয়নের বাওইটোনা গ্রামের বাসিন্দা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের গাবতলী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে বাড়ির অনেক পুরাতন অস্ট্রেলিয়ান হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান গাভি একটি ষাঁড় প্রসব করে। বাচ্চাটি দেখতে অনেক সুন্দর ও নাদুসনুদুস হওয়ায় নাম রাখা হয় বাংলালিংক। গত কয়েক বছরে ষাঁড়টি প্রায় ১৫শ কেজি ওজন হয়। একে নিজ জমিতে চাষাবাদ করা নেপিয়ার ঘাস, খড় ও ভুষি খেতে দেওয়া হয়। প্রতিদিন খরচ প্রায় ৫০০ টাকা। কখনো কোনো ক্ষতিকারক ইঞ্জেকশন বা মোটাতাজা করার চেষ্টা করা হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে বাংলালিংককে লালন পালন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, স্থানীয় উপজেলা পশু চিকিৎসক বলেছেন, বাংলালিংক ষাঁড়ের ওজন হবে প্রায় ১৫শ কেজি। তাই দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। এরপরও বর্তমান বাজার দর অনুসারে বিক্রি করা হবে। যদি বগুড়ায় বিক্রি না হয় তাহলে বাংলালিংককে ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিয়ে যাবেন। 

ভারতী’র মালিক আব্দুস সবুর বাবু বলেন, ৩ বছর  ধরে গরুটির লালন-পালন করে আসছি। গরুটি দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িতে ভিড় করছে। ষাঁড়টি বড় হওয়ার কারণে কোনো হাটবাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাবেন না। যারা কিনবেন তারা খামারে এসে নিয়ে যাবেন। ষাড়টির পরিচর্যায় তিনি কোনো ধরনের ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ব্যবহার করেননি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল, ভুষি, চালের কুড়া, ভুট্টা, ভাতসহ পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে লালন পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত দুই বার করে গোসল করানো, পরিষ্কার ঘরে রাখা ও রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়াসহ প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়।

অন্যদিকে, ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া জাগানো হিরো আলম ষাঁড়ের মালিক জিয়াম বলেন, তার বাবা-দাদারা পূর্ব থেকেই বাড়িতে গরু পালন করতেন। ইউনানীতে পড়াশোনা করে এসে ব্যবসার পাশাপাশি গাভী পালন করে আসছি। তাড়ি ধারাবাহিকতায় ৪ বছর বয়সি ‘হিরো আলম’ তাদের বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছে। 

তিনি আরও বলেন, ষাড়টির যে ওজন এত বেশি হবে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ করেই ষাড়টি এতটা স্বাস্থ্যবান হয়েছে। ষাড়টি পালন করতে করতে তার ওপর অনেক মায়া জন্মে গেছে। আর এ কারণে ভালোবেসে ষাড়টির নাম দিয়েছি ‘হিরো আলম’। ষাড়টিকে বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চান। যে কারণে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে  ষাড়টির ছবি পোস্ট দিয়েছেন। ফেসবুকেও সাড়াও পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ষাড়টির দাম চেয়েছেন ৭ লাখ টাকা বলা দাম বলা হয়েছে।

বগুড়া জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১২ উপজেলায় ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট চার লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদিপশু কোরবানির উপযোগী করেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ৫৯ হাজার ৩৭টি। এ হিসাবে জেলায় অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান,কোরবানীর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক পশু জেলা প্রস্তুত রয়েছে। সৌখিন ও সবচেয়ে বড় আকৃতি ষাড় হিসেবে গাবতলী উপজেলার বাংলালিংক, শহরের রহমাননগরের ভারতী এবং ফুলবাড়ি মধ্যেপাড়ার হিরো আলম। এসব ষাড় এ বছর ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিড়িয়ায় ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত