প্রশ্নফাঁস করে কোটি টাকার মালিক সৈয়দ আবেদ আলী
প্রকাশ: ৯ জুলাই ২০২৪, ১৭:৫০ | আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৫
পিএসসির প্রশ্নফাঁস করে কোটি টাকার মালিক মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পুর্ব বোতলা গ্রামের সৈয়দ আবেদ আলী। দান খয়রাত করে এলাকায় এখন সে দানশীল ব্যক্তি। গড়েছেন মসজিদ, গরুর খামার ও শাক-শবজির বাগান। নিজেকে ডাসার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিলেন। করেছেন নির্বাচনি পোস্টারও। এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করলেও গ্রামের সহজ সরল মানুষের মনে জাগেনি কোন প্রশ্ন।
পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্য মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব বোতলা গ্রামের দিনমজুর মৃত আব্দুর রহমান মীরের মেঝ ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী। হঠাৎ করে ২/৩ বছর আগে এলাকায় এসে দান করা শুরু করে আবেদ আলী। এলাকার মানুষের কাছে তিনি বলেছেন রিয়েল স্টেটসহ অনেক ব্যবসা আছে তার। তিনি একজন শিল্পপতি। এলাকায় মায়ের জমিতে একটি মসজিদ নির্মান করেন। মসজিদের পাশেই নির্মানাধীন ২ কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ শেষ পর্যায়। কমলাপুর বাজারের পাশে রাস্তার সরকারি জমি দখল করে কোটি টাকার গরুর খামার করার কাজ শুরু করেন তিনি। পাশের গ্রামে ১ কোটি টাকা দিয়ে খামার করার জন্য ক্রয় করেন ৬০ শতাংশ জমি। নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করে ছাপান পোস্টার। আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা সামনে এলেও এখনও স্থানীয়রা ভাল মানুষ মনে করেন আবেদ আলীকে।
এলাকার ৩৬ বছরের যুবক মামুন মাতুব্বর বলেন, ১০/১৫ বছর আগেও দেখেছি আবেদ আলীদের পরিবার অনেক গরিব ছিল। আমি শুনেছি সে একটা চাকরি করত। অনেকে আবার সে চাকরিও দিয়েছে। চাকরির কথা বলে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেছে। দুদক এই বিষয়টা তদন্ত করলে অনেক কিছু বেড়িয়ে আসবে। আগে আমার বাবা দাদাদের সাথে সে কৃষি কাজ করছে। রাতারাতি এত বড়লোক কিভাবে হয়ে গেল বিষয়টা বুঝতে পারছিনা। পূর্ব কমলাপুরের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী জানান, আবেদ আলী খুবই ভাল মানুষ। আগে সচিবলায় চাকরি করত। বর্তমানে ব্যবসা করে। সামাজিক লোক। মানুষকে সাহায্য সহযোগীতা করে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, আবেদ আলী জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। ঢাকার কাওরান বাজারে নাকি কাঁচা মালও টানছে। বর্তমানে তার এই সমাজে ভাল নাম ডাক। এলাকার মানুষদের যেকোন বিপদ আপদে সাহায্য করে। দুইদিন যাবৎ ফেসবুকে দেখতাছি আর মানুষের কাছে শুনছি সে নাকি পিএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত এছাড়াও তার অনেক দুর্নীতি আছে।
এলাকার মানুষকে সাহায্য করলেও নিজের ভাইদের কোন সাহায্য করে না আবেদ আলী। সে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মানুষকে সাহায্য করছে। এছাড়াও এলাকাবাসী আরো জানান, ছোট বেলায় আবেদ আলীর পরিবারের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারতো না তার পরিবারের সদস্যরা। অভাবের কারনে আবেদ আলী ৫/৬ বছর বয়সেই ঢাকা চলে যান। এরপরে আবেদ কুলি গিরি করেছেন, রিক্সা চালানোসহ শ্রমিকের কাজ করেছেন। পরবর্তীতে ড্রাইভার হিসেবে চাকুরী করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতেন। আবেদআলীর প্রশ্ন ফাঁস ও অবৈধ সম্পদের কথা শুনে আমরা অবাক। আবেদ আলীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হলেও ভাগ্য ফেরেনি ভাইদের। এমনকি ভাইদের কোন সাহায্য সহযোগীতা করেন না তিনি। বড় ভাই জাবেদ আলী এখনও দিন মজুরের কাজ করেন। এই কাজ করে ধার দেনা করে এক ছেলেকে ইটালি পাঠিয়েছেন তিনি। ছোট ভাই ছাবেদ আলী অটো চালায়। মেজ ভাই আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে চললেন দুই ভাই ও তাদের পরিবার।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ইতিমধ্যে আমরা আবেদ আলীকে নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছি বিভিন্ন দপ্তরে। তার বৈধ কোন সম্পদ আছে কিনা এবং সেগুলোর সঠিকভাবে ক্রয় ও কর দেয়া হয়েছে কিনা তার খবর নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আদালত থেকে যদি তার বিষয়ে কোন আদেশ আসে তা হলে আমরা তা নিয়ম অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবো।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত