প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গ্রেপ্তারদের মুক্তিসহ যেসব দাবি হেফাজত নেতাদের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৪ |  আপডেট  : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৮

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নেতা–কর্মী ও আলেমদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন। শনিবার বিকেলে হেফাজত নেতারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে সকালে রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তনে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে একই দাবি জানিয়েছিলেন হেফাজত নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারীও ছিলেন। পরে তিনি বলেন, হেফাজতের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বিকেল পৌনে চারটার দিকে গণভবনে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা তারা বৈঠক করে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে হেফাজতের চারজন নেতা কথা বলেন। এর মধ্যে সিনিয়র নায়েবে আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি চান। ইতিমধ্যে হেফাজতের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, সে জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের সবাইকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। 

মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামবিদ্বেষী লেখা বাদ দেওয়া ও ধর্মশিক্ষার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান। হাটহাজারী মাদ্রাসারা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন এবারের বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সা’দকে আসার অনুমতি না দেওয়ার দাবি ও যুক্তি তুলে ধরেন।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন রাব্বানী কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রকাশনা বাতিলের দাবি জানান।বৈঠকে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিসও ছিলেন। তিনি রাতে বলেন, তাঁদের দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।

এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলিস্তানে হেফাজতের ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফির ঘোষিত হেফাজতের ১৩ দফা আন্দোলনে ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই। তিনি বলেন, যখনই ইমান-আকিদা বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের স্বার্থ সংরক্ষণে এবং হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নের ডাক আসবে, তখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

সম্মেলনে প্রধান আলোচক ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব সাজিদুর রহমান। কারাগারে হেফাজতের অনেক আলেম-ওলামা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন উল্লেখ করে তিনি দ্রুত সবার মুক্তি চান।

সম্মেলনে হেফাজতের সাত দাবি জানানো হয়। তা হলো: ১. হেফাজতের নেতা-কর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি; ২. তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার; ৩. ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা; ৪. কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা; ৫. শিক্ষা কারিকুলামে ধর্মশিক্ষার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা; ৬ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি রাখা; ৭. এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিতর্কিত মাওলানা সা’দকে আসার অনুমতি না দেওয়া।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আবদুল আওয়াল, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, মুফতি জসিম উদ্দিন, মুফতি মোবারক উল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী প্রমুখ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত