প্রথম যাত্রার বছরপূর্তি -মেট্রোরেল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৭ |  আপডেট  : ১৬ মে ২০২৪, ০৮:২৬

ফাইল ছবি

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে (এমআরটি লাইন ৬) বাংলদেশে মেট্রোরেলের প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা মেট্রোরেল হলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। ২০১৩ সালে অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় যার অধীনে প্রথমবারের মত ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়িত্ব নেয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।

২০১৬ সালে প্রণীত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা অনুসারে ঢাকায় নির্মিতব্য মেট্রো রেলের লাইনের সংখ্যা ৩টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ৬-কে নির্বাচন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। জাইকা ও ডিএমটিসিএল ২০৩০ সাল নাগাদ ১২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মোট ৬টি মেট্রো লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এই নেটওয়ার্কে ৫১টি উড়াল স্টেশন ও ৫৩টি ভূগর্ভস্থ স্টেশন থাকবে। ছয়টি লাইন মিলিতভাবে দিনে ৪৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে এমআরটি লাইন ৬-এর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকায় মেট্রোরেল আংশিক চালু হয় এবং তিনি মেট্রোরেলের প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রার অংশ ছিলেন,যা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য  খুলে দেওয়া হয়। শুরুতে শুধু উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি) এবং আগারগাঁও এই দুইটি স্টেশনে ট্রেন থামত, এরপর ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ পল্লবী স্টেশন খুলে দেওয়া হয়। এমআরটি-৬ লাইনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২৩ সালের ৭ই জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে যাত্রী পরিবহন চলমান রয়েছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে পারে।

ঢাকাবাসীর যাতায়াতের একটি সুবিধাজনক মাধ্যম এখন মেট্রোরেল। মেট্রো রেল আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি নতুন যুগে আবদ্ধ করবে। উন্নত দেশগুলোয় মেট্রো রেল এবং অন্যান্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মাধ্যমগুলোকে একত্রিত করে একটি উন্নত রুট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে যাতে মানুষ শুধু একটি পেমেন্ট কার্ডের মাধ্যমে তাদের গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে মেট্রোরেলে ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। কারণ আশা করা হয়েছিল এটি প্রচুর যাত্রী বহন ক্ষমতাসহ একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহণ সুবিধা প্রদান করবে, এটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে এবং প্রতি ৪ মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন যাতায়াত করবে। তা ছাড়া, বিদ্যমান গণপরিবহণ ব্যবহারে নারীরা প্রায়ই হয়রানির সম্মুখীন হন। এর মধ্যে রয়েছে পিক টাইমে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়, শারীরিক বা মৌখিক হয়রানি, আসনের স্বল্পতা, নিরাপদে বাসে উঠা বা নামা এবং উপযুক্ত পরিবহন খোঁজা। এসব কারণে নারীরা বিদ্যমান পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছে। সুতরাং, তারা মেট্রো রেলে ভ্রমণে আরও আগ্রহী হবে। ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। পিক আওয়ারে বাস না পাওয়া, অতিরিক্ত ভিড়, অল্প ব্যবধান, বাস কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার ইত্যাদি কারণে মানুষের যে ভোগান্তি টা অনেকাংশে দূর হবে। 

 ২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩.৮ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট কর্মঘণ্টার মূল্য বিবেচনায় নিলে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক আকার ধারণ করে যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। তাই আশা করা যায় মেট্রো রেল এই ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনবে । মেট্রো রেল পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে, যা বাংলাদেশে অনেক কাজের সুযোগ তৈরি করে কর্মসংস্থান ও আর্থিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।  

সা/ই

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত