পণ্যবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা উত্তোলনকারী ৩২ জন কে গ্রেপ্তার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৪৯ |  আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:০৩

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত ১টা পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সড়ক ও মহাসড়কে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি থেকে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের সময় ৩২ জন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বিশেষ করে মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে ওই সময় সড়কে এমন চিত্র শুরু হয়। এ চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিরাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে। 

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা র‍্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ। 

র‍্যাব-১  জানায়, পণ্যবাহী কোনো গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করলেই লেজার লাইটের ইশারায় সেসব গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করতেন গ্রেপ্তারর হওয়া চাঁদাবাজরা। 

তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকাসহ সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য উৎপাদনের স্থান থেকে পাইকারি বাজারে পরিবহনের সময় দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধাপে ধাপে চাঁদা দেওয়ার কারণে পাইকারি বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। যার মাশুল দিতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। কিছু কিছু স্থানে র‌্যাব ও ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তী সময়ে আবার আগের মত উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

এ জনদুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদাঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। এরপর অভিযান চালিয়ে ৩২ চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তাররা হলেন, রাকিব হাসান রাব্বি (২০), টুটুল ইসলাম (১৯), ইমন (১৮), মো. ইফসুফ (২২), মো. জোনায়েত (১৯), মো. সিয়াম (১৮), মো. হাবিবুল্লাহ (৩৫), মো. জিহাদুর রহমান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ (২৪), মো. আকাশ মিয়া (২৬), মো. নান্নু হোসেন (২৭) ও মো. মাসুদসহ (৪০) মোট ৩২ জন। 

এ সময় গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ এক লাখ দুই হাজার ৮৬৫ টাকা, ছয়টি টর্চলাইট, তিনটি টার্গেট লাইট, একটি চার্জার লাইট, ২৯টি চাঁদা আদায়ের রশিদ, চারটি রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, দুইটি লাঠি ও ২৫টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, তারা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতি রাতে এসব স্থানে রাস্তার ওপর অবস্থান নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে। 

লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রশিদও প্রদান করে। ড্রাইভাররা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও ড্রাইভার-হেলপারকে মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন থেকে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় নেয়। পণ্যবাহী কোনো গাড়ি দেখলেই লেজার লাইটের আলো নিক্ষেপ করে তা থামিয়ে কৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে ওই সময় সড়কে এমন চিত্র শুরু হয়। এ চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিরাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে। 

তিনি আরও বলেন, যারা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, র‌্যাব-১ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

নাগরিক সমাজকে র‌্যাব আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুত করবে তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে র‌্যাবকে সহায়তা করতে, এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। 

 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত