পঞ্চগড়ে ইজিবাইক চালককে মারধর, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:২৪
পঞ্চগড়ে মমিনুল ইসলাম মমিন (২২) নামে এক ইজিবাইক চালককে বাড়িতে করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সড়ক অরবোধ করে ইজিবাইক চালকগন। নিহত ইজিবাইক চালকের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের মেহেরপাড়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর (রোববার) রাত ১১টার সময় নিজ এলাকার নুরু প্রামানিকের বাড়িতে তাকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনার ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে সময় নিজ বাড়িতে মারা যান মমিন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা হলেন মেহেরপাড়া গ্রামের নুরু প্রামানিকের ছেলে লিমন (৫০), রিপন (৪৫), তুহিন (২২), ও তাদের বাবা নুরু প্রামানিক (৬৫)। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মমিনুল ইসলাম মমিন পেশায় ইজিবাইক চালক।
এদিকে আসামীর বাড়ি মমিনের বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত। ঘটনার কয়েকদিন আগে আসামী লিমনের মেয়ে অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কের জেরে পালিয়ে যায়। এর পর ইজিবাইক চালক মমিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দেয়ার অভিযোগ উঠে পরিবারটির পক্ষ থেকে।
গত পহেলা সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায় আসামীরা তাকে কৌশলে নিজ বাড়িতে ডেকে নেয়। এসময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ইজিবাইক চালক মমিনকে এলোপাথারী কিলঘুষি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। তার চিৎকারে স্থানীয় ইজিবাইক চালক আমিনুল ইসলাম মমিন স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে আসামীদের বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে রাতেই নিজ বাড়িতে নেয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ২ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। টানা দুইদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে নেয়া হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দিবাগত রাত আড়াইটার সময় আবারো অসুস্থ্য হয়ে পড়লে কিছুক্ষণ পরে নিজ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করে মমিন।
মামলার বাদী ইব্রাহিম বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় আমার পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস ছিল এই ছেলে। আর আমার কোন ছেলে সন্তান নেই। আমি এখন কি করবো কোন কিছু বুঝতে পারছি না। আমার এই ছেলের কোনদিন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল না। টাকার অভাবে তাকে আমি ভালো চিকিৎসা দিতে পারি নি। আসামীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করেছে। সে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে অনেক বার মমিন রক্ত বমি করেছে। আমি আসামীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচারের দাবি করছি। স্থানীয় অটোচালক আমিনুল ইসলাম মমিন ও মেহেদী হাসান নিশাত বলেন, আমরা সিও বাজারে তাকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা দুজনে মিলে তাদের বাড়িতে গেলে মমিনুল ইসলাম মমিনকে বাড়ির আঙ্গিনায় পড়ে থাকতে দেখি। দ্রত তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাই। চাকলাহাট অটোবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, আমরা যাত্রী পরিবহন করে থাকি। বিভিন্ন প্রকার যাত্রী আমাদের পরিবহনে উঠে থাকেন। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের দায়ে একজন চালককে এভাবে মারধর করে হত্যা করা হবে এটা কাম্য নয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামী তুহিনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়া অন্যদের সাথেও যোগাযোগ করা হলে তাদেরও পাওয়া যায় নি। এর আগে সকালে অটো চালক মমিনুল ইসলাম মমিনের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় ইজিবাইক চালককরা চাকলাহাট বাজারে প্রায় পাঁচ ঘন্টা পঞ্চগড়-চাকলাহাট সড়ক অবরোধ করে আসামীদের গ্রেফতারে বিক্ষোভ করে। এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, নিহতের বাবা একটি এজাহার দায়ের করেছে। সে অনুযায়ী মামলা দায়ের হবে। একই সাথে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মরদেহটি উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত