কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন নমনীয়তা নয়, রাজনৈতিক দর্শন: ড. মোশাররফ

নয়াপল্টন কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে অর্ধকোটি টাকার বেশি ক্ষতির দাবি বিএনপির

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:১৪ |  আপডেট  : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:১২

গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির ঘটনায় নগদ অর্থসহ অর্ধ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই দাবি করেন। তিনি এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িত পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

একই সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস সহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলাসমূহ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

খন্দকার মোশাররফ ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এই ঘটনায় নগদ অর্থসহ ক্ষতি ও লুট হওয়া সম্পদের পরিমান আনুমানিক ৫০ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, কোনো অফিস বা গৃহ তল্লাশির সময় মালিকপক্ষ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে রাখার সাধারণ আইন অগ্রাহ্য করে পুলিশ যা করেছে তা হানাদার বাহিনীর আচরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

মোশাররফ বলেন, পুলিশ তাদের মামলায় বলেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা নাকি ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি এবং ককটেল নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। বিপুল ও মারাত্মক সব আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার পুলিশকে ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও তাদের ভাষায় ককটেল দিয়ে আক্রমণ করার মতো হাস্যকর অভিযোগ জনগণ বিশ্বাস করে না। পুলিশের এজাহারেই বলা হয়েছে যে তারা ৭ ডিসেম্বর বিকেলে মোট ১৭৯টি টিয়ারগ্যাস ও ৪৬০টি শর্টগানের গুলি ছুড়েছে এবং ৬টি সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। প্রকৃত পক্ষে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

তিনি বলেন, ‘এর বিপরীতে তাদের ওপর আক্রমণকারী বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবহৃত অস্ত্র হিসাবে আলামত দেখানো হয়েছে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ৫ বস্তা ইটের টুকরা [যা শহরের যে কোনো সড়ক থেকে যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়), ৮০টি বাঁশের লাঠি [যা শহরের বহু স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়) ও লালটেপে মোড়ানো কথিত ককটেলের ভঙ্গাংশ [যা ব্যবহৃত টিয়ার গ্যাসের শেল কিম্বা পথের আবর্জনারও অংশ হতে পারে)।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন অসম যুদ্ধের বিবরণ ছোটদের গল্প কিম্বা স্বৈরাচারী শাসকদের প্রেসনোটেই শুধু দেখা যায়। তথাকথিত ক্রসফায়ারের গল্পের মতোই এসব গল্প এখন শুধুই কৌতুকের খোরাক এবং অক্ষমের আর্তনাদ।’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘অফিস থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, হার্ডডিক্স, নথিপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র, নগদ অর্থ লুট করা প্রকৃত পক্ষে একটি ডাকাতির ঘটনা। ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি হামলার পর পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও মালামাল লুটে অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।’

মোশাররফ দাবি করেন, ‘এই ঘটনার পর গত কয়েক দিনে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১৩০০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সব ঘটনা জনগণের তীব্র ঘৃণা ও অনাস্থার শিকার পতনোম্মুখে সরকারের স্বৈরাচারী কায়দায় টিকে থাকার ব্যর্থ প্রয়াস বলেই দেশবাসী মনে করে।’

বিএনপি সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় থেকেও দেখিয়েছি। আমাদের আচরণ কিন্তু গণতান্ত্রিক। আমরা তা ভবিষ্যতেও দেখাবো।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, মৌলিক মানবাধিকার, সাম্য ও সকল নাগরিকের জন্য অর্থনীতিক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লাখো শহীদের রক্তে স্বাধীন বাংলাদেশ। গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশে গণবিরোধী সরকারের নির্দেশে তার বিভিন্ন বাহিনী যে নির্মম নিষ্ঠুরতা ও বর্বর আচরণ করেছে তা শুধু বিজয়ের মাসকে কলঙ্কিত করেনি। গণতন্ত্র হত্যাকারী ও বারবার গণতন্ত্র হত্যায় সহায়তাকারী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী ও গণবিরোধী পরিচয় পুনরায় প্রকাশ করেছে।

তিনি আরো বলেন, দলের মহাসচিবকে অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে এবং দলের অন্যান্য নেতাদের কয়েকটি কক্ষে আটকে রেখে অসংখ্য টিয়ারগ্যাস, গুলি, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে। সাদা ব্যাগে করে নিজেরাই ককটেল নিয়ে মহাসচিবের ও জাসাস কার্যালয়ের টয়লেটে মোট ১৫টি ককটেল রেখে তা উদ্ধারের যে নাটক, মিডিয়ার কল্যাণে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে।

ড. মোশাররফ বলেন, ক্ষতি ও লুট হওয়া সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৫০,৮২,৫০০ (পঞ্চাশ লাখ বিরাশি হাজার পাঁচ শত) টাকা। কোনো অফিস বা গৃহ তল্লাশির সময় মালিকপক্ষ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসাবে রাখার সাধারণ আইন অগ্রাহ্য করে পুলিশ। তারা যা করেছে তা হানাদার বাহিনীর আচরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনায় জড়িত পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

বিএনপি’র সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

২৪ ডিসেম্বর বিএনপির গণমিছিল তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ ডিসেম্বর করাকে আপনাদের নমনীয়তা কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্ন ড. মোশারফ বলেন, এটা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। আমরা ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছিলাম। ২৪ তারিখে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল হবে। সেই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে অনুরোধ করেছেন। গণমিছিলের তারিখ পরিবর্তন করার জন্য। আমরা রাজনীতি করি। আমাদের দল মধ্যপন্থী গণতন্ত্রপন্ত্রী রাজনীতি করে। বিএনপি সংঘাতে রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। নীতির প্রেক্ষাপটে আমাদের এই তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে। কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন এটা কারো কাছে নমনীয়তা নয়। এটা আমাদের রাজনৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক চিন্তাধারা।

তিনি আরো বলেন, ১৪ বছর ধরে নির্যাতন-জুলুম করছে। আওয়ামী লীগ কখনো বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারে না। স্বাধীনতার পরে ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত তারা একই আচরণ করেছে। বর্তমানে তারা একই আচরণ করছে। আমরা আমাদের কোনো সমাবশে, মিছিল-কর্মসূচি বাধাহীনভাবে করতে পারি না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ প্রমুখ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত