ঢাকায় কোটা বৈষম্য আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে

নিহত পঞ্চগড়ের আবু সায়েদের পরিবারে এখন হাহাকার

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি  

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৪২ |  আপডেট  : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৬

কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পঞ্চগড়ের আবু সায়েদ নিহত হওয়ায় তার পরিবারে চলছে হাহাকার। তার বাড়ী পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের প্রধানহাট এলাকায়। কোটা আন্দোলন চলাকালে ঢাকার বছিলায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে  ১৯ জুলাই মারা যান তিনি।

তার রয়েছে মুদি দোকান। পরিবারে একমাত্র উর্পাজনকারী আবু সায়েদ। সংসার চালাতে তিনি এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তার মুদি দোকান পরিচালনা করতেন। তাকে দিতে হতো এনজিওর সাপ্তাহিক কিস্তিও । এখন সেই কিস্তি আর পরিবারের ভোরনপোষণ কে করবে! তা নিয়ে পরিবারটিতে চলছে হাহাকার। আবু সায়েদের  স্ত্রী মাজেদা বেগম সহ রয়েছে ১০ম শ্রেণীর পড়–য়া ছেলে মামুন ইসলাম ও মেয়ের ঘরের আড়াই বছরের নাতনী মনিসা। ঢাকায় মোহাম্মদপুরে ছিল আবু সায়েদের একটি মুদি দোকান। বাড়ীতে সংসার চালাতে তিনি  সপ্তাহে আড়াই হাজার টাকা পাঠাতেন। আর তিনি থাকতেন বছিলার চল্লিশ ফিট এলাকায় বলে জানায় তার পরিবার। বছর দুয়েক আগে সেখানে দোকান দেন তিনি। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই দোকানের প্রয়োজনে রাস্তায় বের হন ‘ এমতাবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পড়েন তিনি। এমন সময় উপড় থেকে তার মাথায় এসে একটি গুলি লাগে। এসময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।দীর্ঘ সময় তা নিথর দেহটি  রাস্তায় পড়ে থাকে। এরপর সেখানকার লোকজন মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় ভাবে জানাযা শেষে তার মরদেহ নিজ বাড়ী পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়ায় পাঠিয়ে দেয়।পরদিন তার মরদেহ সেখানে দাফন করা হয়।

তবে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবু সায়েদের পরিবারে হতাশা আর হাহাকারের প্রতিচ্ছবি। জরাজীর্ণ বাড়ীর মাটির ভাঙ্গা দেয়াল ও ঘর।বাড়ীর পাশে বসে ছিলেন তার ছেলে মামুন ইসলাম ও মা মাজেদা বেগম। মাত্র ১৫ শতকের উপড় আবু সায়েদের  বসত ভিটা। ওই বসতভিটার জমিটিুকুও স্থানীয় কৃষি ব্যাংকে জামানত দিয়ে ঋন নেয়া আছে ‘ ৪৫ হাজার টাকা। সেই টাকা নিয়ে তার ব্যবসা শুরু করেন। সেই ঋনের কিছু পরিশোধের পর এখন সুদে-আসলে ব্যাংকের পাওনা প্রায় একলাখ ২০ হাজার টাকা।

এছাড়া স্ত্রী মাজেদা বেগম সংসার চালাতে এক এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋন তুলে দেন স্বামী আবু সায়েদকে।এই ঋনের বিপরীতে সপ্তাহের কিস্তি দিতে হয় এক হাজার ছয়শত টাকা। ব্যাংক ও এনজিওর কিস্তির চাপে দিশেহারা পরিবারটি। সরজমিনে গেলে আবু সায়েদের স্ত্রী জানান, মারা যাওয়ার একদিন আগে তার সাথে কথা হয়েছিল ‘  বলেছিল সে পরদিন টাকা পাঠাবে। কিন্তু শুনি তাকে গুলি করে মারা হয়েছে। শুনেছি সে দোকানের জন্য পলিব্যাগ আনতে যায়।হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলি লেগে সে মারা যায়।তিনি ছাড়া আমাদের পরিবারকে চালানোর মতো কেউ নেই। যে বাড়ীতে থাকতো সে বাড়িওয়ালা টাকা তুলে লাশ পাঠিয়ে দেয়। চোখভরা জলে তাকে শেষবার ঠিকমত দেখতে পারিনি ভাই। ছেলে মামুন ইসলাম বলে ‘ দাফনের আগে আমি বাবার লাশ দেখেছি ‘ বাবার মাথার তালু থেকে পিছনের অংশ ছিল না। সেখানে তুল আর ব্যান্ডেজ দিয়ে ভরা। আমার বাবার তো কোন অপরাধ ছিল না। পত্রিকায় দেখেছি বাবার মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়েছে। আমরা কি এর বিচার পবো! ঘটনার পর আমাদের এখানে সাংবাদিক ছাড়া কেউ ও আসেনি‘ খবরও নেয়নি।তবে প্রশাসন থেকে দুজন এসেছিলেন। তাদের টাকায় মায়ের ওষুধ ও এনজিওর ঋনের কিস্তি চলতো। বাড়ী বন্ধক রেখে বাবার নেওয়া ৪৫ হাজার টাকা এখন একলাখ ২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে গতমাসে ব্যাংক থেকে নোটিশ এসেছে। এখন আমাদের কি হবে’। আবু সায়েদের বড় ভাই সমেত মিয়া বলেন ‘ এভাবে ভাইয়ের মৃত্যু কি ভাবে মেনে নেই। আমার ভাই ঢাকা থেকে টাকা দিয়ে তার পরিবারকে চালাতেন। ঢাকার দোকান মালিক আমার ভাইয়ের লাশ পাঠিয়েছে ‘স্থানীয় ও তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল হক বলেন ‘ আবু সায়েদ গরীব মানুষ ‘ তার ভিটেমাটি ছাড়া কোন কিছুই নাই। সে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ঢাকা থেকে ছেলের লেখাপড়া ও সংসার চালাতেন।

এদিকে ঢাকার বছিলায় আবু সায়েদের বাসা ভাড়ার মালিক তুষার জানান , সায়েদ খুব সহজ-সরল ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি স্থানীয় নিয়ে তিনি তার লাশ পঞ্চগড়ের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পরে মারকাজুল সংগঠনের মাধ্যমে ২৭ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করি। সেই টাকা আমরা সবাই মিলে দেই।

এদিকে বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহরিয়ার নজির বলেন ‘আমরা আবু সায়েদের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ীতে যাই এবং কিছু খাদ্য সহায়তা প্রদান করি। এটা খুব সামান্য ছিল।তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে।সেটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। আশা রাখি পরিবারটির জন্য খুব দ্রুত কিছু একটা করা যাবে। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত