নির্মলেন্দু গুণের দুটি কবিতা

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১, ১২:৩০ |  আপডেট  : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:২৮

 


সুন্দরগঞ্জ বা বাঁশখালীর গল্প

‘রাইতভর ঘুমুইতে পারি না, 
.......ওরা আবার কহন আয়ে,  
কহন আয়ে।’

আর কান্দিস না মা, আমার কথা শোন,
তুই তোর হাতের শাঁখা খুলে ফেল,
মুছে ফেল তোর সিঁথির সিঁদুর।
মা-কালীর শেষকৃত্য দেখে-দেখে, 
শেষে আমাদের শেষকৃত্য 
ডেকে আনবি নাকি?

চল মা, তোর ভগবান পুড়ছে, পুড়ুক।
এই চন্দ্রমুগ্ধ মূর্খের উল্লাস থেমে গেলে
একাত্তরের মতো আমরা ফিরে আসবো আমাদের অগ্নিশুদ্ধ ঘরে।
তখন তিনিই ফিরিয়ে দেবেন তোর
শাঁখা-সিঁদুর, জোড়া লাগিয়ে দেবেন
তোর প্রতিমার ছিন্নভিন্ন দেহ।
তোর ভগবান কি অথর্ব, অন্ধ নাকি?

"তবে তাই কর বাবা, এই যে আমি
বন্ধ করলাম আমার চোখ, 
তুই ভেঙে দে আমার শাঁখা, 
মুছে দে আমার সিঁদুর,
জ্বলে-পুড়ে শুদ্ধ হোক আমার ঠাকুর।"


রক্ষা করো, হে ভৈরব

হাজার খানেক সশস্ত্র সক্ষম পুরুষ (বাঁশের লাঠি, কিরিচ, কুঠার এবং দু’চারটি বন্দুক-পিস্তলও নিশ্চয়ই ছিলো) যদি কোনো একটা এলাকার, বিশেষ ধর্মের নারী-বৃদ্ধ-শিশু নির্বিশেষে নিরস্ত্র, নিরীহ-বাসিন্দাদের বাড়িঘর, জানমাল ও মানসম্ভ্রমের উপর ৫-৬ ঘণ্টা ধরে আক্রমণ চালায়; 
আর সেই অভাবিত, পরিকল্পিত আক্রমণের হাত থেকে আক্রান্তদের বাঁচানোর জন্য যদি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ বা নিকটস্থ থানা-পুলিশ এগিয়ে না আসে, 
তবে তো সাত-পুরুষের ভিটিবাড়ি ছেড়ে জীবন ও সম্ভ্রম নিয়ে নদীর ওপারে চলে যাওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকে না। 

ঐ এলাকার হতভাগ্য বাসিন্দাদের তবু ভাগ্য ভালো যে, তাদের বাসস্থানের কাছেই একটি শীতশান্ত নদী ছিলো।  নদীটির নাম-- ভৈরব। খুব সুন্দর নাম। 

হিন্দুরা যে বহু প্রাচীন কাল থেকেই নদ-নদীর পুজো করে আসছে, 
মনে হয়ে এবার তার কিছুটা সুফল
তারা পেয়েছেন। 
সাঁতরে ভৈরব নদী পাড়ি দিয়ে 
ওপারে গিয়ে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে পেরেছেন তাদের অনেকে।

যথার্থই বলেছেন কবি--"ওপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস।" 
মানুষকে প্রণাম জানাতে পারলে খুশি হতাম। 
আপাতত হে ভৈরব, আপনাকে প্রণাম।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত