নির্বাচনী সহিংসতায় মুন্সীগঞ্জ সদরে শাকিল-রিয়াজুল নিহত
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৪৯ | আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৫৬
নির্বাচনী সহিংসতায় মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়নে শাকিল মোল্লা (৩০) ও শহরের উপকণ্ঠ প সার ইউনিয়নে মো. রিয়াজুল শেখ (৫৮) নামের দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। রোববার রাতে ভোট গ্রহণ শেষে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সময়ে পৃথক পৃথক এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।
বাংলাবাজার ইউপির বানিয়াল উত্তর ভূকৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষনায় বিলম্ব হওয়ায় সংরক্ষিত আসনের দুই নারী ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে শাকিল মোল্লাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং শহরের উপকণ্ঠ প সার ইউপির মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রিয়াজুল শেখের উপর বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর গোলাম মোস্তফার লোকজন বাড়ীতে হামলা চালিয়ে বেদম মারধর করার এক পর্যায়ে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে জানান নিহতের স্ত্রী বিলকিছ বেগম। রিয়াজুল মুক্তারপুর গোসাইবাগ এলাকার প্রয়াত আলতাব উদ্দিনের ছেলে। নিহতের ভাই মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প সার ইউনিয়ন পরিষদের টেলিফোন প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় কেন্দ্রে ঝগড়া হওয়ার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা বলেন, গোলাম মোস্তফা চেয়ারম্যানের এলাকায় গুন্ডা বাহিনী রয়েছে। তার ভয়ে এলাকার লোকজন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এবারে যারা তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে, তাদের মধ্যে অনেককেই মোস্তফা চেয়ারম্যানের লোকজন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল।
জানতে চাইলে প সার ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, যে ব্যক্তি মারা গেছে তাদের লোকজন মুক্তারপুরের কেন্দ্রে ঝামেলা করে। তখন আইন-শৃক্সখলা র¶াকারী বাহিনীর সদস্যরা সবাইকে পিটিয়ে বের করে দেয়। সন্ধ্যার পরে তারা মিছিল করছিল। একই সময়ে আমাদের মিছিলও বিপরীতমুখি গোসাইবাগ দিয়ে যাচ্ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় দৌড়ঝাপ করতে গিয়ে রিয়াজুল শেখ স্টোক করে এবং পরে সে মারা যায়। তার মৃত্যুর ঘটনায় আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলেও দাবী করেন বিজয়ী চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।
অপরদিকে রোববার ভোট গ্রহন শেষে বাংলাবাজার ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বানিয়াল উত্তর ভূকৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষনায় বিলম্ব হওয়ায় সংরক্ষিত আসনের দুই নারী ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত শাকিল মোল্লা শরীয়তপুর শখিপুরের কাচিকাটা এলাকার হারুন মোল্লার ছেলে। শনিবার মুন্সীগঞ্জের বাংলাবাজার ইউনিয়নের বানিয়াল দক্ষিণ ভূই কৈলাশ গ্রামে নানা নিরু মাঝির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো। নিহত শাকিল ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, বাংলাবাজার ইউনিয়নের ৭, ৮, ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংর¶িত নারী আসনে বই প্রতীকের প্রার্থী আরফা বেগম ও কলম প্রতীকের প্রার্থী রাবেয়া বেগমের সমর্থকদের মধ্যে ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব হওয়া নিয়ে সংঘর্ষ হয়।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, বাংলাবাজারে কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় দুই নারী সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনায় শাকিল মোল্লা নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করলে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সে মারা যায়। এছাড়া রাতে প সারে একজন মারা গেছে বলে শুনেছি। তার পরিবারের দাবী, প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থীর তার মৃত্যুর জন্য দায়ী এমন দাবী করলেও এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ দাখিল হয়নি। বর্তমানে তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার শৈবাল বসাক জানান, রোববার রাত সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালে আনার আগেই শাকিল মোল্লা অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে মারা যায়। এর এক ঘন্টা পর প সার থেকে রিয়াজুল শেখ নামের এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তবে তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই জানা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত