নতুন ভাড়া নির্ধারণ, চলবে আজ থেকেই

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৭ নভেম্বর ২০২১, ২০:১১ |  আপডেট  : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৮

ডিজেলের বর্ধিত দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাসভাড়া নির্ধারণের পর দেশব্যাপি পরিবহন ধর্মঘট আজই প্রত্যাহার করে নেবার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতা।

আজ এক বৈঠকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাস-মিনিবাস এবং দূরপাল্লার বাসের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে বিআরটিএ। পরিবহন খাতের চলমান অচলাবস্থা সমাধানের লক্ষ্যে ওই বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

এসময় পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, সারাদেশের পরিবহন মালিকদের আজ থেকেই ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

নির্ধারিত নতুন ভাড়া অনুযায়ী দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বাস-ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে।

অন্যদিকে মিনিবাসের ভাড়া হবে এর চাইতে ১০ পয়সা কম । মিনিবাসের নতুন নির্ধারিত ভাড়া বেড়ে প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৫ পয়সা হয়েছে।

সেইসঙ্গে বাসের সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাস ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সিএনজিচালিত বাস/মিনিবাসের ক্ষেত্রে নতুন নির্ধারিত এই ভাড়া প্রযোজ্য হবে না বলে বৈঠক থেকে জানানো হয়।

এ বিষয়ে আজকের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে। সে হিসেবে আগামীকাল থেকে সারাদেশে নতুন এই ভাড়া কার্যকর হবে।

এদিকে লঞ্চের ভাড়াও কিলোমিটার প্রতি ৬০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। নতুন ভাড়া এখন কিলোমিটার প্রতি হয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। যেটা কিনা আগে ১ টাকা ৭০ পয়সা ছিল।

বিআইডব্লিউটিএ বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি ঘোষণা দেয়।

এখন থেকেই নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং লঞ্চ চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে চলবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কেউ এর চাইতে বেশি ভাড়া নিলে কিংবা সিএনজিচালিত বাস/মিনিবাস ভাড়া বাড়ালে ভ্রাম্যমান আদালত, পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিআরটিএ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

উল্লেখ্য গত বুধবার খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে সরকার। লিটারপ্রতি দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়।

বর্ধিত দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া পুননির্ধারণের আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় বাস ভাড়া দ্বিগুণ করার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে সারা দেশের পরিবহন মালিকরা।

পরে পরিবহন মালিক সমিতি সেই ধর্মঘটের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলে জানান সমিতির মহাসচিব মি. এনায়েত উল্লাহ।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী নতুন ভাড়া নির্ধারণের জন্য রবিবার ধর্মঘটের মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। যা প্রায় ৫টা পর্যন্ত চলে।

সেখানে মি. এনায়েত উল্লাহ বলেন, "গত ৮ বছরে বাসের যন্ত্রাংশের দাম, অন্যান্য খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাস ভাড়া বাড়েনি। যতোটুকু না হলে নয় সেটাই মেনে নিয়েছি।"

সর্বশেষ ২০১৩ সালে বাসের বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এই সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য ২৩% বেড়েছে, ইস্পাতের মূল্য ১৯% বেড়েছে বলে পরিবহন মালিকরা জানিয়ে আসছেন।

এর মধ্যেই ডিজেলের ভাড়া লিটার-প্রতি ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ফলে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করার দাবি দীর্ঘদিনের বলে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এদিকে বাংলাদেশে সিএনজি চালিত বাসের সংখ্যা ১-২% এর মতো। যার বেশিরভাগই ডিজেলে ফেরত যাচ্ছে।

এই সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত বলে তিনি জানান।

তবে ওই বৈঠকে ডিজেলের দাম কমানোর বিষয়ে প্রস্তাব রাখা হলেও জ্বালানি মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন এই দাম রাখার কথা জানিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

যদি তেলের দাম কমে, তাহলে বাসের ভাড়া কমিয়ে আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে গত দুই দিনের মতো আজও বাস-ট্রাক মালিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখায় রোববার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহনে গন্তব্যে যেতে গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া।

দূরপাল্লার যাত্রীরাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। নিরুপায় অনেক যাত্রীকে হেঁটে না হলে পিক-আপে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে পণ্য ও যাত্রীবাহী সড়ক পরিবহনে ধর্মঘট শুরু করেন মালিক ও শ্রমিকরা। আজ রোববার ছিল সেই ধর্মঘটের তৃতীয় দিন।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত