দ্যুতি ছড়াচ্ছে পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো

  মিজানুর রহমান ঝিলু

প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:১৭ |  আপডেট  : ৮ জুলাই ২০২৪, ০০:৫৫

জায়গা-জমি অধিগ্রহণের পর মূল পদ্মা সেতু নির্মাণের বাইরে নদী শাসন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আর পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সুখ-সাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে হাটবাজার, মসজিদ, পুকুর, খেলার মাঠ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিকিৎসা কেন্দ্র। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ সেতুর উত্তর প্রান্তে লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশলদিয়া ও কুমারভোগ ইউনিয়নের কুমারভোগ এলাকায় দুটি এবং পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবায় দুটি এবং মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাখরেরকান্দি এলাকায় পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছে। মাওয়া চৌরাস্তা মোড়ের অদূরেই মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন। কুমারভোগ পদ্মা বহুমুখী সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্র এখানেই। যেন পদ্মাপাড়ের এক খণ্ড সবুজ বেষ্টনী। প্রবেশদ্বারেই চোখ জুড়ানো রকমারি ফলদ, ওষধি ও ফুল গাছের সারি। মাঝে নান্দনিক মসজিদ। মসৃণ পিচঢালা পথ। পুকুরপাড়ে কংক্রিটের ঢালাই। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও সেজেছে নান্দনিক সাজে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনেরও দারুণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেতুপাড়ের এ পুনর্বাসন এলাকায়। পুনর্বাসন কেন্দ্রের গেট থেকে কয়েক পা হাঁটতেই দেখা যায় পরিকল্পিত একটি মসজিদ। আসরের নামাজ পড়ে বের হয়েছেন কয়েকজন মুসল্লি। যাদের অধিকাংশই হাজি। সবাই পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিবেশে খুশি। এই পরিবেশকে সবাই গুলশান-বনানীর সঙ্গে তুলনা করেন! পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো যেন সবুজের সমারোহ ও ইট পাথরের মেল বন্ধন। গ্রাম-শহরের মিশেল পরিবেশে এখানকার বাসিন্দারা আছেন বেশ আনন্দে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো দিচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সেবা। ছোটখাটো অসুখে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মিলছে ওষুধপত্রও। এমনকি এ কেন্দ্রে ব্র‍্যাক, প্রশিকা ও পল্লী শিশু ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ নামের তিনটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার শাখা রয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রশস্ত সড়কে হাঁটতে বের হলে মনটা জুড়িয়ে যায়। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি। কথাগুলো বলছিলেন কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা নাসির খান। তিনি বলেন, মাওয়া চৌরাস্তার সাথেই বাড়ি ছিল। পদ্মা সেতুর জন্য সেই বাড়ি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাপদাদার ভিটেবাড়ি হারানোতে তখন মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে বাড়ির ন্যায্যমূল্য পাওয়াতে এবং সেই সাথে পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্লট বরাদ্দ পাওয়ায় গ্রামে থেকেও শহুরে জীবনযাপন করছি। নাসির খানের সাথে সুর মেলান শাহ আলম কাওড়া, নায়ীম খান ও মজিবুর রহমান খান। তাঁদের ভাষ্য, কেন্দ্রের ভেতরে হাঁটাহাঁটি করে, সুন্দর মসজিদে নামাজ পড়ে আরাম পাই। এখানে গ্রাম আর শহরের পরিবেশ একসঙ্গে পাচ্ছি। যশলদিয়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আব্দুর রহমান ব্যাপারী জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে তিনি ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ জমি দিয়েছেন। বিনিময়ে সরকার পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাঁর চার ভাইকে পাশাপাশি দিয়েছে ৯ লাখ টাকা। এটা নিয়ে মহাখুশি আব্দুর রহমান। তিনি সভ্যতার আলোকে বলেন, আমরা পুনর্বাসনে থাকতে পেরে অনেক খুশি। জায়গা-জমি যা গেছে, সরকার আমাদের প্লট দিয়েছে, টাকা দিয়েছে। কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা গৃহবধূ রহিমা বেগম জানান, হাটবাজার, প্রাইমারি স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল সবই হাতের কাছে রয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে হয় না। যশলদিয়া পুনর্বাসন কেন্দ্র মসজিদের ইমাম মো. জাকির হোসেন বলেন, এখানে সবই আছে। শুধু কবরস্থান হলেই পুরোপুরি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই কাটানো যায়। কুমারভোগ পদ্মা সেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে সিদ্দিকা লিপি জানান, তাঁর স্কুলের পরিবেশ ও ভবন উপজেলার সেরা। সেই সাথে তাঁর স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশের হার প্রায় শতভাগ- যা কেন্দ্রের বাইরের বিদ্যালয়গুলো থেকে অনেক অনেক ভালো। 

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত