দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০১ |  আপডেট  : ৮ মে ২০২৪, ১৩:২০

ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং মেম্বার অজিত বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে কেউ যদি সহায়তা করে তাহলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মধুখালীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি জানান, এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সময় আরও সাতদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন হেভিচ্যুয়াল অফেন্ডার স্বভাবগত অপরাধী। কোথায় কখন কিভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় সেটি তিনি ভালো জানেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে আমরা মাগুরায় তার অবস্থান সনাক্ত করি। কিন্তু যখন তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয় তখন যশোরে পালিয়ে যায়। এরপর যশোরেও তাকে ধরতে অভিযান চালানো হলেও পাওয়া যায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনকে এর আগে দুইবার বরখাস্ত করা হয়েছিলো। একবার ইউএনওর উপরে হামলার ঘটনায় এবং আরেকবার টিসিবির কার্ড দুর্নীতির কারণে তাকে বহিস্কার করা হয়। দুইবারই উচ্চ আদালতে আপীল করে তিনি পদ ফিরে পান। একারণে তার মধ্যে একধরনের বেপরোয়া মনোভাব তৈরি হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন, যতো অপরাধই করুক না কেনো তিনি পার পেয়ে যাবেন।

ঘটনার পর ধর্মমন্ত্রীর সফরের সময়েও চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন মন্ত্রীর প্রোগ্রামে দেখা গেছে এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, তার দ্বৈত ভুমিকার কারণে তাকে সেভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। তবে যখন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেনো দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন। তারা তাদের আইনগত সুবিধা নেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সকলের সহযোগিতা চাই। তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। কেউ যদি অন্যান্য আসামিদের অবস্থানও জানাতে পারেন তাহলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে।

তিনি পঞ্চপল্লীর ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রসংসা করে বলেন, এ ঘটনার পরে ফরিদপুরের সাংবাদিকেরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে এমন একটি নিউজও করে নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ফরিদপুরের সাংবাদিকদের এই আচরণে তাদের প্রশংসা করেছেন। ঘটনার পর আমাদের সাথে ওই রাতে ঘটনাস্থলেও থেকেছে। তারা প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করায় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিষবাষ্প ছড়ানোর আশঙ্কা ছিলো সেই সুযোগ কেউ পায় নাই।

"এ পর্যন্ত আপনারা যথেষ্ট দ্বায়িত্বশীল আচরণ করেছেন। এটি সমগ্র ফরিদপুরের মর্যাদা রক্ষা করেছে। বাকি দিনগুলো আমরা সবাই মিলে ফরিদপুরে এই সহাবস্থান অব্যাহত রাখতে পারি সে আহ্বান জানাচ্ছি।" জেলা প্রশাসক বলেন।

প্রসঙ্গত, ১৮ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীর কালি মন্দিরে আগুনের গুজব ছড়িয়ে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার একদিন পর থানায় মামলা তিনটি নথিভুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় মোট ১২ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ফরিদপুর-যশোর মহাসড়কে অবরোধ করেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ কারণে দ্বিতীয় দফায় বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ৪ প্লাটন বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত