দাম না পাওয়ায় জমিতেই কচু রেখে দিচ্ছেন কৃষকেরা!
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৫:৩৭ | আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২
গত কয়েক বছর ধরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা কচু চাষে সফলতা দেখলেও এবার দাম না পাওয়ায় জমিতেই কচু রেখে দিচ্ছেন কৃষকেরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, করোনা অতিমারির কারনে চলমান সংকটে পাইকাররা কম আসছে। ফলে কচু বিক্রি ও ভালো দাম পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কচুর আদি উৎপত্তিস্থল উপমহাদেশের পূর্বা লে হলেও দীর্ঘদিন ধরে শিবগঞ্জ উপজেলার সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৫২০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বর্ধমান জাতের কুড়ি কচু। কোন ল¶মাত্রা না থাকলেও খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার কচুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুড়ি কচু ২০০ হেক্টর, পানি কচু ৫০ হেক্টর ও লতিরাজ কচু ৫০ হেক্টর। উপজেলায় কচুর গোত্রীয় সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় মুখী কচু বা কুড়ি কচু। কুড়ি কচু ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে তুলতে হয়। এছাড়াও পানি কচু ও লতিরাজ কচুও চাষ হয় এই অ লে। স্থানীয় কচুচাষি সূত্রে জানা যায়, আমরা ফাল্গুন মাসে কচু রোপন করে ভাদ্র মাসে তুলি। পলি দোআশঁ ও এটেল মাটিতে কচু চাষ ভালো হয়। এ ফসলে ৪ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হয়। চাহিদা বেশি থাকলে অনেকে ৮-১০ সপ্তাহ পরেই কচু তোলা শুরু করি। কচু চাষে জৈবসার বেশি লাগে। তবে কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ধান ও অন্যান্য সবজি চাষের তুলনায় কচু চাষে ২ থেকে ৩ গুন বেশি লাভ হয় বলে জানান কৃষকরা। উপজেলার এই কচু রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরেই সরবরাহ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শিবগঞ্জ ইউনিয়ন ও শিবগঞ্জ পৌর এলাকায় ২০০ হেক্টর বিস্তীর্ণ দিগন্ত মাঠ জুড়ে করা হয়েছে কচু চাষ। যতদুর চোখ যায় দেখা মেলে সবুজ কচু গাছের। এছাড়াও উপজেলার মোকামতলা, দেউলী, সৈয়দপুর, কিচক, ময়দানহাট্টা ইউনিয়নে মাঠ জুড়ে ১০০ হেক্টর কচু চাষের দেখা মেলে। মাঠে কচুর জমি চোখে পড়লেও সম্প্রতি কৃষকদের বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমজাদ হোসেন জানান, ধান ও অন্যান্য সবজি চাষে ২ থেকে ৩ গুন বেশি লাভ হয়। আমরা এবার ১ বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছি। গতবার ভালো দাম পেয়েছি। এবার দাম না থাকায় এক বিঘা জমির কচু সবার জন্য তোলার উম্মুক্ত করে কচু তুলে অন্য ফসল আবাদ করেছি।
উপজেলার গুজিয়া বন্দর এলাকার কৃষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছি। গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে কচু বিক্রি করেছিলাম পাইকারী প্রতিকেজি ২০ টাকা হিসেবে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা বিক্রি করেছি। খরচ বাদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছি। এ বছর ৩ বিঘা জমিতে কচু বিক্রি করেছি মাত্র ১২ হাজার টাকা। লাভ তো দুরের কথা খরচের টাকা এবার উঠবে না।
পাইকারী বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে ও আমদানী বেশি হওয়ায় এবার কচুর দাম কম। পাকারী বাজারে প্রতিমন কচু বিক্রি করছি ৪০০-৪৫০ টাকায়। তিনি আরো বলেন, এ অ লের কচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরগুলোতে রপ্তানি হয়। দাম না থাকায় কৃষকের পাশাপাশি আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত।
স্থানীয় কৃষক আজিজ এর ভাষ্যে, দেশের চলমান অবস্থার জন্য কচুর দরপতন। এ ছাড়াও প্রতি মণ কচু জমি থেকে তুলে বাছাই করতেই বাড়তি আরও ৫০০ টাকা খরচ হয়। আবার খুচরা বাজারেও প্রতিদিনই একটু করে দাম কমছে। এ জন্য কৃষকদের লাভের অংকও কমছে। শিবগঞ্জ থানা বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী সাথে কথা বললে তারা বলেন, গত সপ্তাহে কুড়ি কচু ১৫- ২০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে দাম কমে ১০-১৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগামী সপ্তাহে দাম আও কমতে পাবে। বগুড়া জেলার বায়ার ক্রোপ সায়েন্স কোম্পানী লিমিটেডের সিনিয়র টেরিটরি অফিসার কৃষিবিদ গোতম চন্দ্র দাস বলেন, বগুড়ার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কৃষির জন্য মানানসই। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কৃষকদের এবার কচুর দাম পাওয়া মুশকিল হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, কচু চাষ খুবই লাভজনক পেশা। দিন দিন কচুর চাষ এই অ লে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুড়ি কচুর পাশাপাশি পানি কচু ও লতিরাজ কচু চাষ করেও কৃষকরা কম সময়ে লাভবান হতে পারে। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন খরচের দ্বিগুনের বেশি লাভ হয় বলে কৃষক কচু চাষের দিকে ঝুঁকছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত