তোহা বাজার দখল করে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার মার্কেট নির্মাণ
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪১ | আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৩
জমি জেলা প্রশাসকের অথচ বহুতল ভবনের মার্কেট করার টেন্ডার দিয়েছে পৌর মেয়র। ঠিকাদারও দিন রাত কাজ করছে। তোহা বাজার হিসাবে ব্যবহৃত জেলা প্রশাসকের জমিতে এই কাজ করেছে রাজৈর পৌরসভা। আবার স্থানীয় এক ব্যক্তির এই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা চলমান আছে। প্রকল্পের টাকা লুটপাট করার জন্য জেলা প্রশাসকের সহযোগীতায় পৌর মেয়র এই কাজ করছে বলে বন্দর এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পরেছে।
জানা গেছে, মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী বন্দর টেকেরহাট বন্দর। এই বন্দরের বাজারের মধ্যে একটি খোলা স্থানে ৬০ বছর ধরে চলে আসছিল মাছ, মাংস ও সবজির বাজার। এই বাজারই তোহা বাজার হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশ সরকারের হাট বাজার গেজেটের ৬ এর ২ ধারার ৪ নং উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘হাট বাজারের অভ্যন্তরে নির্ধারিত পরিমান জমি তোহা বাজার হিসাবে সংরক্ষণ করিতে হইবে যাহা কোন প্রকার বন্দোবস্ত প্রদান করা যাইবে না।’ এই তোহা বাজারে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর মাদারীপুর ব্যবসায়ীদের সুবিদার্থে দুটি টলঘর নির্মান করে দিয়েছিল। টলঘর দুটি অকশন না দিয়ে এবং ব্যবসায়ীদের কোন নোটিশ না করে হঠাৎ করে জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে টলঘর দুটি ভেঙ্গে দিয়ে ‘জেলা প্রশাসকের জমি অনধিকার প্রবেশ নিষেধ’ একটি লাল সাইনবোর্ড দিয়ে দেয়। এর পরপরই তরিঘরি করে রাজৈর পৌরসভার ঠিকাদার বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করে। জেলা প্রশাসনের এই উচ্ছেদ ও পৌরসভার ঠিকাদারের তরিঘরি করে কাজ শুরু করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কি জেলা প্রশাসন পৌরসভার মার্কেট নির্মানের জন্যই এই কান্ড ঘটিয়েছে। পৌরসভার মার্কেট প্রজেক্টের টাকা নয় ছয় করতেই জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মচারী ও কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে তোহা বাজারে অবৈধভাবে এ মার্কেট নির্মাণ করছে রাজৈর পৌরসভা। এতে রাজৈর ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছে পৌরসভা মার্কেট করছে এটা ভালই করছে। এই মার্কেটের প্রয়োজন আছে। আবার অনেকে বলছে, তোহা বাজার দখল করার অধিকার কারো নেই। তারপরও পৌরসভা বাজারটি দখল করে মার্কেট করছে। এটা অন্যায়। প্রজেক্টের নামে মার্কেট নির্মাণ করে টাকা লুটপাট করতেই পৌরসভা এ কাজ করছে। কোন নোটিশ ছাড়া ও তোহা বাজারের টলঘর অকশন না দিয়ে জেলা প্রশাসনের হঠাৎ টলঘর ভেঙ্গে ফেলা এবং পৌরসভাকে কাজ করার সুবিধা করে দেয়াকে ভাল চোখে দেখছেনা কেউ।
এই তোহা বাজারের জমির মালিকানা নিয়েও আদালতে চলছে মামলা। সেই মামলার এখনও চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি আদালত। এ অবস্থায় কিভাবে জেলা প্রশাসন টলঘর ভেঙ্গে জেলা প্রশাসকের জমি দাবি করে সাইববোর্ড দেয় এমন প্রশ্ন জমির মালিকানা দাবি করা মামলার বাদী মো. মহাসিন উদ্দিন হাওলাদারের।
তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, জেলা প্রশাসন যে জমি তার জমি বলে দাবি করে সাইনবোর্ড দেয় এবং অনাধিকার প্রবেশ নিষেধ করে সেখানে পৌরসভা প্রকাশ্যে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ কিভাবে শুরু করে। বিষয়টি তদন্ত করে এ অবৈধ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান মো. মহাসিন উদ্দিন হাওলাদার।
খালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুল শাহ আলম মিয়া প্রশ্ন করে বলেন, পৌর মেয়র কিভাবে জেলা প্রশাসকের জমিতে টেন্ডার দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে। তিনি বলেন, সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত। জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা যদি এ ধরণের অবৈধ কাজ করে তাহলে দেশে আইন বলে কিছু থাকবে না। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের জমি দখল করে যেভাবে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে রাজৈর পৌরসভা তাতে প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলদারিতে উৎসাহ যোগাবে।
তোহা বাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি বলে মনে করেন রাজৈর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার দাবি উপজেলা চেয়াম্যানের।
এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশিদ খান ও রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশীদ কোন কথা বলতে রাজি হননি।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত