তেতুঁলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান ও আ’লীগের  সম্পাদককে হত্যার হুমকি

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৭ |  আপডেট  : ২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৩

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে,নৌকার বিপরীতে ভোট করার কারনে তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনের নৌকা প্রার্থীর পক্ষে এক নির্বাচনী প্রচার অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলুকে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে ভোট করার কারনে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ মতে, গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকায় আ'লীগের দলীয় প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তার নৌকা মার্কার উঠান বৈঠকে বক্তব্য প্রদানকালে এমন হুমকি দিয়েছেন বলে তোফাজ্জল হোসেন তোফা নামে ওই নৌকা মার্কার প্রার্থীর অনুসারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।  

এদিকে নৌকার প্রার্থীর ওই অনুসারীর বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় মানুষরে মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

ভিডিও বক্তব্য ওই নৌকা মার্কার অনুসারী তোফাজ্জল হোসেন তোফা তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু ও  সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান  ট্রাকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ায় তাদের কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালি দেন ৷  এসময় বক্তব্য মাঝে তিনি বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী ডাবলুর সমালোচনা করার সময় তেঁতুলিয়ার উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শ্রমিক নেতা মুক্তারুল হক মুকুকে মদখোর হিসাবে আখ্যা দিতে দেখা যায়৷ 

বক্তব্যে দেয়ার সময় তোফা নামে ওই নৌকা মার্কার অনুসারী হুশিয়ারী দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ডাবলুকে উদ্দ্যােশ করে বলেন,'তুমি বুঝতে পারছো নাঈমুজ্জামান মুক্তা যদি এমপি হয়, তাহলে তো আমার ভগ্নিপতির সাথে তো সম্পর্ক ভাল না,আমার মামাও তো  (বর্তমান সাংসদের ভাগিনা ডাবলু) বুড়া, নমিনেশন জীবনেও পাবে না। তাই ভাবছো সম্রাটের কিছু টাকা আছে সেগুলো নিয়ে শেষ কামড় দিয়ে কিছুটা ঘরে ঢুকি৷ তোমার ঘরে ঢুকে লাভ নাই৷ নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া সর্বপ্রথম তোমাকে দুদকে নিয়ে রাখবে,তোমাকে হিসাব দিতে হবে'৷ 

এসময় তিনিও আরও বলেন, শুরু থেকে তোমার শেষ,আর কয়েকটা দিন। আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি নাইবুল চেয়ারম্যানকে মার  দিয়ে আমরা ঘরে ঢুকিয়েছি। নজরুল ওয়াকশপকে আমরা ডাঙ্গায় মেরে ফেলেছি। এবার তোমাকে মারবো (ডাবলু চেয়ারম্যানকে) নৌকার ভোটে৷ তোমার বাচন নাই (বাচার সুযোগ নাই)৷  তিনি এসময় বক্তব্যের মাঝে অশ্লীল কথা বলে আরও বলেন,এবার ভাল করবো এই শয়তানদের, লাঠির চাপে নৌকার ভোট দেয়াবো

এদিকে তোফাজ্জল হোসেন তোফা নামে ওই নৌকা মার্কার অনুসারী ও সমর্থকের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এবিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু বলেন,প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে৷ তাই পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে যে যার মতো প্রচারণায় নেমেছে৷ আমি একজন জনপ্রতিনিধি আমার বিষয়ে দলীয় প্রার্থীর অনুসারী ও সর্মথক তোফাজ্জল হোসেন তফা যে বিভ্রান্তিকর,মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তফা একজন কুখ্যাত চোর। আমি আশা করছি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা  ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত বলেন, আমাদের ট্রাক মার্কার কর্মী ও সর্মথকদের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছে নৌকা মার্কার কর্মী ও সমর্থকরা। গতকাল সন্ধ্যায় তোফাজ্জল হোসেন তফা নামে যে নৌকার কর্মী ও অনুসারী আমাদের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ডাবলুকে নিয়ে  কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও হুমকি দিয়েছেন। তিনি কাকে যেন মেরে ফেলছেন সেই স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন ।  আমরা বিষয়টি  জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটিকে অব্যগত করেছি৷ আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এতে সাধারণ ভোটাররা উৎসাহী হবেন এবং নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আগ্রহী হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি৷ 

উল্লেখ্য, প্রায় ১ যুগ আগে তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে দলীয় অফিসকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ ওই ঘটনায় জাতীয় শ্রমিক লীগের তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, হাফেজসহ কয়েক জন গুরুতর আহত হন৷ পরে আহত হওয়ার কয়েক দিন পর অবস্থার অবনতি হলে নজরুল ইসলাম নামে ওই শ্রমিকলীগ নেতার মৃত্যু হয়। সেই নজরুল ইসলামকে মারার কথার স্বীকারোক্তি দেন তফা নামে ওই ব্যক্তি।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত