কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শক

তিস্তা নদী থেকে অবাধে লক্ষ লক্ষ সিএফটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

  কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি  

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২২, ১৯:৩৪ |  আপডেট  : ৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:২৭

দেশে আইন আছে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নাই, তার উৎকৃষ্ট উদাহারণ তিস্তা নদী থেকে অবৈধ ভাবে প্রতি রাতে লক্ষ লক্ষ সিএফটি বালু অবাধে উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় দুই মাস ধরে প্রকাশ্যে তিস্তা সেতু এলাকা থেকে বালু খেকোরা বালু নিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ যেন নিরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করছে। সরেজমিনে তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেতুর দক্ষিন প্রান্তে দুই সেতুর মাঝ ও গার্ড ব্যাংকের পাশ থেকে ট্রাকটর (কাকড়া) দিয়ে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরের বালু অবাধে কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। বালু বিক্রি করে একটি চক্র লাখ লাখ টাকা আয় করলেও সরকারি কোষাগারে কানাকড়িও জমা হচ্ছে না। বরং সরকারি ভাবে বালু মহল ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা করলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারতো। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিস্তা সেতু এলাকায় এক ব্যক্তি জানান, আগে দিনের বেলাই ১৫ থেকে ২০টি ট্রাকটর (কাকড়া) বালু তুলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতো। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হলে এরপর কর্তৃপক্ষের সাথে হয়তো সমঝোতা করে লোক চক্ষুর আড়ালে রাতের আধারে শুরু হয় বালু নিয়ে যাওয়ার ব্যবসা। রাতা ৯টা থেকে চলে ফজরের আজান পর্যন্ত বালু পরিবহনের কাজ। বালু ভর্তি ট্রাকটর (কাকড়া) গুলোর কারণে গ্রামীন রাস্তা গুলোরও বেহাল দশার  সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা নদী থেকে এভাবে লক্ষ লক্ষ সিএফটি বালু পাচার হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সাংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোন ভুমিকা দেখা যাচ্ছেনা। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা দাপটের সাথে বলেন নিউজ করে কি হবে, যারা ব্যবস্থা নিবেন তারাই আমাদের সাথে আছেন। এই বালু বিক্রি চক্রটির সাথে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় মাতাব্বর, প্রভাবশালী মহল, এমন কি কিছু কিছু কথিত মিডিয়ার লোকজন জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে ভুগর্ভস্থ বালু তুললে আমরা আইনী ব্যবস্থা নিতে পারি, কিন্তু কেউ কোদাল দিয়ে উপরের বালু নিলে আমাদের করার কিছু থাকে না। আবার অনেক সময় সরকারী অনেক প্রকল্পে বালুর প্রয়োজন হয় তখন বালু তুলতে দিতে হয়। আবার সামাজিক ভাবে মসজিদ, কবরস্থান ভরাট সহ বিভিন্ন রাস্তার কাজে বালুর প্রয়োজন হলে সমাজপতিদের অনুরোধে বালু নিতে দিতে হয়। 

তিস্তা সেতুর উত্তর প্রান্ত একদিকে চর গোকুন্ডা, দক্ষিণ প্রান্তে টেপামধুপুর থেকে হারাগাছ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে অবাধে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই অনেকে বলেছেন, দেশে আইন আছে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নাই। বালু তোলার বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা তারিন জানান, আমরা বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছি, অনেকের জরিমানাও করেছি, সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সাধারন মানুষের কথা বালু যদি তুলতেই হয় তবে বালু মহাল ঘোষনা করলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় হবে অন্য দিকে এলাকার সাধারন মানুষের উপকার হবে। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত