তিউনিসিয়ায়  নৌকাডুবি নিহত ৮ যুবকের ৫ জনই মাদারীপুরের, স্বজনদের আহাজারি

  এসআর শফিক স্বপন,মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৪ মে ২০২৪, ০৯:৪৭ |  আপডেট  : ১৮ মে ২০২৪, ১২:১৯

সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার সময় তিউনিসিয়ায় উপকূলে ভূমধ্যমাগরে  নৌকাডুবিতে ৮ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ৮ জনের মধ্যে ৫ জনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। বাকি ৩ জন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। এদিকে বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে  সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তাদের মরদেহের কফিনগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের  পৌঁছে। মরদেহ নিতে বিমানবন্দরে ভিড় করেন নিহতের ¯^জনরা। কিন্তু ময়না তদন্তের জন্য মরদেহগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। শুক্রবার সকালে ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে  দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নিহতরা হলেন- মাদারীপুরের রাজৈরের  কোদালিয়া  গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর  ছেলে সজীব কাজী, পশ্চিম ¯^রমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী  শেখের  ছেলে মামুন  শেখ,  সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর  ছেলে সজল বৈরাগী, উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের  ছেলে নয়ন বিশ্বাস,  কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার। অন্যদিকে  গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ মিয়া, ফতেয়াপট্টি এলাকার মো. রাসেল ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস  আপন।

নিহত স্বজনরা জানায়, গত ১৪ জানয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও  গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালীর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। প্রথমে তারা বিমানযোগে লিবিয়া  পৌঁছায়। পরে তারা  ১৪ ফেব্রুয়ারী  লিবিয়া  থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। মাঝপথে তিউনিসিয়া উপকূরে ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে যায়। পরে ভূমধ্যসাগরেই ডুবে যায় নৌকাটি। এতে আরও আরোহীদের সঙ্গে তারাও প্রাণ হারায়। কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।

স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া  গ্রামে রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেি য়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০/১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালী পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা।

নিহত মামুন  শেখে বড় ভাই সজীব  শেখ বলেন, আমার ভাইসহ আট যুবকের মরহেদ  দেশে এসেছে। এখন মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা  মেডিকেলে নিয়েছে। একবার তিউনিসিয়ায ময়না তদন্ত   হয়েছে, এরপরও আমাদের  দেশে এটা করার প্রয়োজন  ছিল না। বাড়িতে সবাই মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছে, কখন  যে  যেতে পারব বুঝতে পারছি না।

নিহত সজীবের বাবা মিজানুর রহমান কাজী বলেন,  ছেলে মারা  গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে এখন  মে মাস। মরদেহ  দেশে আসলো  দেরি করে, তারপরও  ভোগান্তি। কখন আমার  ছেলের মুখটা  দেখতো পাব, সবাই লাশের অপেক্ষা করছে।

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, তিউনিসিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের পক্ষ  থেকে  কোন আইনগত সহযোগিতা চাইলে ব্যবস্থা  নেয়া হবে। এরইমধ্যে সরকারিভাবে মরদেহ  দেশে  পৌঁছেছে। পরিবারের অভিযোগের  প্রেক্ষিতে দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত