ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিদাতারা নীতিজ্ঞান বিবর্জিত: ঢাবি উপাচার্য

  গ্রামনগর বার্তা অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৮ |  আপডেট  : ২ মে ২০২৪, ২৩:২৭

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আদালতে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবিতে বিভিন্ন দেশের যে ১৬০ ব্যক্তি খোলা চিঠি দিয়েছেন, তারা নীতিজ্ঞান বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তাদের এই বিবৃতির কারণে মানবতা লজ্জিত হয় বলেও মনে করেন তিনি।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।  ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে ১৬০ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন দাবি করে এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে উপাচার্য বলেন, ‘কিছু মানুষ যারা আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত, তারা যখন কোনও অন্যায় এবং দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নেন, তখন মানবতা লজ্জিত হয়। প্রতিটি সমাজেই কিছু মানুষ থাকেন, যারা নীতিজ্ঞান বিবর্জিত। অনেক সময় তারা নানা প্রলোভনের মুখে পড়ে অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেন। এই ১৬০ জন মানুষ যারা বিচার প্রক্রিয়াধীন একটি বিষয় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, তারা নীতিজ্ঞান বিবর্জিত মানুষ।’

তিনি আরও বলেন,‘আমার ধারণা তারা লবিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। তাদেরকে হয়তো বা কোনও গোষ্ঠী কোনও রাজনৈতিক দল বা সম্প্রদায় কিংবা কোনও ব্যক্তি  নিয়োগ করেছেন  অর্থের বিনিময়ে। সে কারণেই হয়তো তারা আজকে কোনও দুর্নীতি এবং অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এটি কিন্তু তারা নিজের দেশে করতে পারতেন না।’

ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে উপাচার্য বলেন, ‘এমনও কিছু মানুষ আছে যাদের নিজেদের দেশ, দেশের মূল্যবোধ সংস্কৃতি এবং দেশের গৌরবময় অর্জনের সঙ্গে কোনও সম্পৃক্ততা থাকে না। বাংলাদেশেও এমন কিছু মানুষ আছে, যে নামগুলো এখানে উচ্চারিত হচ্ছে, যাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে, তাদেরকে কখনও আপনারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, আমাদের মহান অর্জন— যেগুলো অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানে বা চেতনার প্রোগ্রামে তাদেরকে আপনারা দেখবেন না। কারণ, এই মানুষগুলো একটি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্দার অন্তরালে থেকে নানা ধরনের পরিস্থিতির সুযোগে স্বার্থ হাসিলের জন্য নিয়োজিত থাকেন। আর এই স্বার্থ হাসিলের সুরক্ষার জন্য তারা আন্তর্জাতিকভাবে অন্য মানুষদেরও হায়ার করে থাকেন।’

তবে এই বিবৃতিকে বিচার ব্যবস্থার ওপর হুমকি বা হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন না উপাচার্য আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এই বিবৃতিকে আমাদের বিচারব্যবস্থার ওপর হুমকি বা হস্তক্ষেপ বলে ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ বাংলাদেশের যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি সব অন্যায় হস্তক্ষেপকে দূর করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।  সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এই ধরনের অপশক্তি যারা আমাদের আইনের শাসনকে ব্যাহত করার নানা অপপ্রয়াস গ্রহণ করেছেন, তাদের ষড়যন্ত্র যেন নস্যাৎ করে দেওয়া হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক  মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘সরকার তো ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনও মামলা করেননি। তাহলে ১৬০ জন বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তি কেন না জেনে, না বুঝে বিবৃতি দিলেন— সেটা আমাদের একটা বড় প্রশ্ন। ১৯৯৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ৯৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কিস্তি বাকি করায় দরিদ্র মানুষদের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার সার্টিফিকেট মামলা করেছেন ড. ইউনূস। এসব মানুষ ছিল দরিদ্র,  যারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে  ঋণ নিয়েছেন, কিন্তু ৯৮ সালের বন্যায় তাদের সবকিছু ভেসে গিয়েছে। সে সময় অনেকে দরিদ্র মানুষ কিন্তু আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৩ হাজার সার্টিফিকেট মামলা করে সেসময় ড. ইউনুস বিবৃতি দিয়েছেন, আইনের চোখে সবাই সমান। তাহলে এখন তিনি কি আইনের চোখে সমান না? এই বিষয়ে আমরা জানতে চাই— ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধ কিংবা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি কোনও কিছুর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত হন না। তিনি কখনও শহীদ মিনারে যান না, তিনি কখনও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না, তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কোও বিবৃতি দেন না, তিনি স্মৃতিসৌধে যান না। তার টার্গেট হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন— ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: জিয়া রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক প্রক্টর অধাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুর রহিম, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন, কবি জসীম উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ শাহীন খানসহ আরও অনেকে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত