ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় ৪০০ কোটি, রোগীপ্রতি খরচ ৫০ হাজার টাকা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১৭:২৫ |  আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৭

চলতি বছর ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সরকারের ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতালে সেবা নেওয়া মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

রোববার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনের বলরুমে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব তথ্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাহিদ মালেক।

চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ এডিস মশাবাহিত এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রাণহানির তালিকাটাও দীর্ঘ হচ্ছে। এবছর ইতোমধ্যে ৫৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যাও লাখ ছাড়িয়েছে। এখনো প্রতিদিন শত শত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উগ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন কাজে আসছে না।

রোববার বনানীর হোটেল শেরাটনে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনার মতো ডেঙ্গু চিকিৎসাও বিনামূল্যে দিচ্ছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় দুই ধরনের খরচ হয়। যাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা বা প্লাটিলেট নিতে হচ্ছে তাদের চিকিৎসা ব্যয় এবং যাদের লাগছে না তাদের খরচ ভিন্ন।

জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় চলতি বছর সরকারিভাবে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। রোগী প্রতি সরকারের গড়ে ব্যয় ৫০ হাজার টাকা।

সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪১১ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২৩৬। এছাড়া এবার এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৩৭ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের অর্ধেকই ঢাকার বাসিন্দা জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের অর্ধেক রোগী ঢাকা সিটি করপোরেশনে। বাকি অর্ধেক সারাদেশে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অর্ধেক রোগী কমে যাবে।

আক্রান্তে পুরুষের তুলনায় নারী কম থাকলেও মৃত্যুতে নারীর হার বেশি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে মোট ভর্তি রোগীর ৬০-৬৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ শতাংশ নারী। অথচ মোট মৃতের মধ্যে নারীদের হার ৬৫ শতাংশ। নারীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নিতে দেরি করছেন। তাদের অসুস্থতার ক্ষেত্রে পরিবারসহ আশপাশে মানুষদের নজর দিতে হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়া। আমরা তা করে যাচ্ছি। আমরা রোগীদের স্যালাইনসহ সেবার সব ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সিটি করপোরেশনসহ সকলের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করছি। তাদেরকে এডিস প্রতিরোধে সহযোগিতা করছি। আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কারও একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একে অপরকে দোষারোপ না করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে আমরা মানুষের জীবন নিয়ে ডিল করছি।’

মশা নিধনে গুরুত্বারোপ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ, কলকারখানায় নিয়মিত স্প্রে করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে ব্যবহৃত ওষুধগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। কারণ মশাগুলো একটি সময় পর ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে যায়। এ নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় জড়িত সকল স্টেক হোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত