ঝুমন দাশদের কথা বলার অধিকার নেই

  হাসান শান্তনু

প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৪৫ |  আপডেট  : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৪৮

ঝুমন দাশের ফেসবুকে দেয়া মতামতকে (স্ট্যাটাস) পুলিশ যে ব্যাখ্যায় 'উস্কানিমূলক' বলছে, তিনি কথাটা সেভাবে বলেননি। পুলিশের ব্যাখ্যার সঙ্গে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাসের প্রমাণিত দ্বিমত আছে। বিদ্যমান বাস্তবতাও ভিন্ন। মন্দিরের গেটে মসজিদের দানবাক্স টাঙিয়ে রাখার দৃশ্য নতুন কিছু নয়। দেশের অসংখ্য হিন্দু মসজিদে টাকা দেন, মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছেন। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মাজারে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান দান করছেন। ঢাকায় রামকৃষ্ণ মন্দিরসহ বিভিন্ন এলাকার মন্দিরের সীমানা দেয়ালে কোরানের আয়াত, মুহাম্মদের (সা.) বাণী লেখা আছে। আব্রাহামিক ধর্মের উপাসনালয় মসজিদ, সিনাগগে তেমনটা সাধারণত দেখা যায় না।

সনাতন ধর্মের অন্যতম মর্মকথা সব মতের সহাবস্থান। মানুষের আধ্যাত্মিকতা ও একের মধ্যে বহুর অবস্থান পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেছে সনাতন ধর্ম। এই ধর্মাবলম্বীদের সমাজের বহুত্ববাদ বিশেষ সৌন্দর্য। মন্দিরের গেটে মসজিদের দানবাক্স সরাতে তাই দেশের হিন্দু সমাজকে ব্যানার হাতে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে-ভেতরে কখনোই দাঁড়াতে দেখা যায়নি। সুুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাস ধর্মীয় বিবেচনায় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংখ্যাগুরুর 'মানসিকতার' তুলনা বোঝাতে মন্দিরের গেটে মসজিদের দানবাক্স ঝুলিয়ে রাখার কথাটা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংখ্যালঘুদের কোনো কথা বলার যে অধিকার নেই, ঝুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ তা প্রমাণ করেছে।

এমনিতেই সংখ্যালঘুদের কোনো দেশ থাকে না। তারা কোনো ভূখণ্ডে রাষ্ট্রধর্ম বিদ্যমান থাকলে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হন। সেখানে প্রশাসন কোনো ধর্মকে আলাদা মর্যাদা দিলে ওই ধর্মের 'রাজনৈতিক সংস্করণের' চর্চা বাড়ে। একসময় এ উপমহাদেশের মুসলমানরা সৃষ্টিকর্তার নামের আগে শ্রী বলতেন, লিখতেন। তা খুব বেশি দিনের কথা নয়। তাদের নামও তখন হতো নারায়ণ, গোপাল, প্রভাত ইত্যাদি শব্দে। সৃষ্টিকর্তার নামের আগে তারা শ্রী বিশেষণ যোগ করে বলতেন, লিখতেন- শ্রী শ্রী করিম, শ্রী শ্রী রাহমান...। রাজনীতিতে ইসলামের অনুপ্রবেশের পর থেকে মুসলমান সমাজ শব্দ ব্যবহারে 'আরবায়িত' হতে থাকে। উগ্রতা ছড়ায়। সহনশীলতা নষ্ট হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুরের রায়বাড়ির পুকুরের একপাড়ে গ্রামের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ। ওই ভবন নির্মাণে অনেকের সঙ্গে রায়দের আর্থিক সহায়তাও আছে। রায় পরিবারগুলোর পূজার বাসিফুল জলে ভাসতে ভাসতে এসে ভিড়ে মসজিদের ঘাটে। অন্যের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আঙ্গুল দিয়ে আলতো স্পর্শে সেসব ফুল সরিয়ে রায়বাড়ির পুকুরের জলে ওযু করে মুসলমানরা প্রতিদিন নামাজ পড়েন ওই মসজিদে। বিষয়টিতে কোনো ধর্মের কারো ‘অনুভূতিতে’ কখনো আঘাত লাগেনি।

লেখক: সাংবাদিক

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত