জীবন মরনের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু  হে আমার রয়েছো দাঁড়ায়ে--------!!! 

  অলক কুমার মিত্র  

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ১২:৩৫ |  আপডেট  : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:০২

শাহজাহান বাচ্চু  লেখক কবি প্রকাশক  সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা। এসবের বিশেষনের চাইতে ও বেশী তুই আমাদের বন্ধু, আমার বন্ধু।

মুক্তচিন্তা চর্চায় তোর মত মতান্তরে আমরা কেউ হয়ত তোর যুক্তির কাছে পরাজিত অথবা ৯০ ডিগ্রি বিরোধী। আবার দোটানায় পরে হা বা না কোনটায় ছিলো না অনেকে। আমার বিশ্বাস তোর অবিশ্বাস এ সংঘাতে  তর্ক হতে পারে তাই বলে হত্যা কেন?

তোর স্বাধীনতা তোর কাছে দোয়েল। আমাদের  বিশ্বাস  তোর অবিশ্বাস যোজন যোজন দুর। তাই বলে হত্যা? একজন কবির মৃত্যু  কী এতই সহজ? একটি আত্মার বিনাশ কী তার চিরন্তন কে হারিয়ে দেয়?

 দর্শনের মৃত্যু নাই।  তোর মত মতান্তর  তোর কাছে, আমরা সেখানে বিশ্বাসী ছিলাম না আমরা আমাদের চিরন্তন পথেই ছিলাম, আছি  তাই বলে তোকে বন্ধু বলে কখনো অস্বীকার করার কারন ছিলো না।

আমার দর্শন আমার কাছে তোর দর্শন তোর কাছেই। এখানে মত মতান্তর থাকতেই পারে। মানুষকে ভালবাসার মধ্যে কোন দোষ নেই।

আমরা সেই কবে থেকে বন্ধু?  তোর মনে আছে?ফয়েজ ভাইর তোপখানা রোডের বাসায়  তুই আমি কানন পাঠান - মোহন- অসীম - রফিকভাই বসেছিলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক  শাহজাহান মিয়া। 

বিলুপ্ত করি লৌহজং প্রেসক্লাবের সবার ঐক্য প্রক্রিয়ায় গঠিত হয় বিক্রমপুর প্রেসক্লাব। 

ভুল বললাম তোর সাথে আমার পরিচয় সেই পাক আমলে যখন আমরা ছাত্র ইউনিয়ন করতাম লেনিন ভাইয়ের সাথে। তখন কী জানতাম একদিন আমরাই প্রেসক্লাব করবো।তখন কী জানতাম তুই অসাধারণ হয়ে ঝড়ে পরবি? 

তার পরে তোর প্রথম সাহসীকতার ফসল বিশাকা প্রকাশনীর যাত্রা। দেশের প্রথম কবিতা প্রকাশনা সংস্হা। 

নিজের টাকায় এমন রিস্ক নেয়া মানুষ বিরল। তোর বৈদেশিক উর্পাজনের টাকা দিয়ে বাংলাবাজারে তোর বিশাকা প্রকাশনা হতে দেশের শীর্ষস্হানীয় কবি হতে নতুন কবিদের প্রায় ৬০০ কবিতার বই তুই প্রকাশ করেছিস। 

তোর বিশাকা প্রকাশনিতে কত আড্ডা দিয়েছি সেটা আশির দশক। সোনালি আশি! 

দেশের অনেক বরেন্য কবির প্রথম বইটি ও তোর বিশাকা হতেই। একথা আজ কজন পুস্তক প্রকাশনা সংস্হা  জানে?  না জানার কারন হলো বেশ ক'বছর তুই এ জগত হতে দুরে ছিলি। ঠিকমত ব্যবসাটা করিস নি।

আর সৃজনশীল শিল্পমাধ্যমে প্রকাশনা সংস্হা গুলো বর্তমান কে নিয়ে তাদের প্রশার সাজাতে যতটা ব্যস্ত তাদের সাবেক প্রিয় কোন সহযোদ্ধার দিকে নজরে তেমন সময় তাদের কই? 

জাগরনী সংঘ হলদিয়ার উদ্যোগে লেখক পাঠক সমাবেশ  করি আলহাজ্ব নান্নু বেপারী পাঠাগারে।  তুই ও সে যাত্রায় সামিল হয়েছিলি। 

হাবিবুল্লাহ  সিরাজি ভাই( বাংলা একাডেমির  এখন মহাপরিচালক)  তার সাথে আমাকে তুই পরিচয় করে দিয়েছিলি,সে পরিচয় আজো বহমান।  আজ সিরাজি ভাই ও পরপারে। 

তাঁকে  সমাবেশে তুই আমাদের হয়ে নিমন্ত্রণ করেছিলি। সেখানে প্রথিতযশা সাহিত্যিক কবি সাংবাদিক প্রকাশক গন গিয়েছিলেন।

আফসোস  তুই ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি। তোর দেয়া বই গুলো আজো পাঠাগারে আছে।পাভেল কে মাসে একবার পাঠাতাম তুই বই দিতি। 

সততা কে জাগ্রত করতে চেয়েছিলি। তোর গ্রামে দোকান দিয়েছিলি আর সে দোকানে বড় বড় হরফে  বাংলা সাইন বোর্ডে লেখা ছিল '' এখানে বাঁকিতে মালামাল বিক্রি  করা হয়"! 

কেউ তোর সততার মূল্য দেয়নি। ধার্মিক - অধার্মিক আস্তিক- নাস্তিক  সবাই বাঁকিতে মাল নিয়ে আর দোকান মুখি হননি।  মানবিক বিশ্ব আর মানবাধিকার আর মানবতা আজ যোজন যোজন দুরে দোস্ত!  

রাম- রহিম- জোসেফের বিরোধিতা যতটা প্রবল হবে ততটা ক্ষমতাবাজরা তাদের হীনস্বার্থে তাদের বিস্তার ঘটাতে পারবে। 

কলমের স্বাধীনতা বা বাক স্বাধীনতা কে হত্যা করলেই শেষ করা যায় না, মতের অমিল পথের অমিল লেখা দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটিয়ে প্রতিবাদ বা মত মতান্তরে উপস্থাপন করা যেতে পারে সেখানেই আমরা পরাজিত  তুই জয়ী,তোরা জয়ী। 

আমাদের প্রান কাদঁলেও লোকভয় লজ্জায় আমরা বুকবেধেঁ দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা। তুই পেরেছিলি?  সে ইতিহাস এখনো সত্য না মিথ্যা  তা বলার সময় আসেনি তবে তোর জীবন বোধ হতে আমাদের জীবনবোধ দুর বহুদুর।  

ধর্ম - অধর্মের মারামারি  আছে, থাকবে। ধর্ম বিশ্বাসি আমরা ও থাকবো।আবার রাজনৈতিক মারপ্যচে এই ধর্মই নিয়ামক হয়ে উঠে এসত্য কে মেনে নিয়েই জীবন চলে।

এখনো  কোন শেষ বিচারে কোন সীমা রেখায় যতি চিহ্ন  দেয়া যাবে না। আউল - বাউল ধার্মিকদের উপমহাদেশে  হাছন রাধারমন- রবীন্দ্রনাথ - নজরুল- করিম শাহ আছে।তাইতো রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন আমার প্রানের মানুষ আছে প্রানে--! 

জীবন কে আমরা ভালবাসি তুই হয়ত ভালবাসিস নি! তাই হয়ত জীবন নিয়ে জুয়া খেলেছিস! জীবন থেকে শুরু আবার জীবনেই শেষ - এক জীবনে আর কী? বা কত? তাই না বাচ্চু?

 বিপাশা তোর আত্মজা। দূর্বা তোর আত্মা। এ আত্মজা/ আত্মাদের রেখে এখন কেমন আছিস?

 তোর কাকালদি প্রিয় গ্রামে তুই পূর্নিমার আলোয়  কত অনুষ্ঠান করেছিস। নিমন্ত্রণ করেছিস যাওয়া হয়নি।

  প্রকৃতি, আলো, চাঁদ  তোর প্রিয় ছিলো তারচেয়ে প্রিয় ছিলো তোর মানুষ আর মানবিক মূল্যবোধ। 

সিপিবির জেলা কমিটির  সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ও কাজ করেছিস।তরুন জীবনে সাংবাদিকতা। এক জীবনে বহুমাত্রিক গুনে গুণান্বিত ছিলি।

 শেষ দেখা জাতীয় জাদুঘর শাহবাগের অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের গুনিজন সংবর্ধনার অনুষ্ঠানে।অল্পসময় কথাও বলতে পারিনি।

১১ই জুন তোর  তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী।তোকে নমিত  শুভেচ্ছা ---!

 দোস্ত ভাল থাকিস -আলোয় থাকিস।  রবীন্দ্রনাথের কথায় বলি জীবন মরন সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধু হে আমার রয়েছে দাঁড়িয়ে --! সকল বির্তকের  উর্ধে এখন তুই। তোর আত্মার শান্তি কামনা করি।

লেখক (প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক বিক্রমপুরপ্রেসক্লাব)    

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত