চলতি মাসে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি হবে, আরও বাড়ছে মানুষ
প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩২ | আপডেট : ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৬
চলতি বছরের নভেম্বর মাসে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটিতে পৌঁছে যাবে বলে ধারণা জাতিসংঘের। তবে আগামী দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা হ্রাস পাবে ও আঞ্চলিক বৈষম্যও বৃদ্ধি পাবে।বিশ্বের জনসংখ্যার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস
জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ অনুমান করছে, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ৮০০ কোটি হবে। ১৯৫০ সালে জনসংখ্যা ছিল ২৫০ কোটি।জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের কর্মকর্তা রাচেল স্নো এএফপিকে বলেন, ১৯৬০ সালের দিকে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ২.১% হয়। ২০২০ সালে এটি ১% এর নিচে নেমে আসে।জনসংখ্যার ক্রমাগত হ্রাসের কারণে এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ০.৫% এ নেমে যেতে পারে।
প্রত্যাশিত আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্তান জন্মদান বৃদ্ধি পাওয়ার হারের বিষয়ে জাতিসংঘ বলছে, ২০৩০ সালে জনসংখ্যা ৮৫০ কোটি, ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটি আর ২০৮০ সালের দিকে ১০৪০ কোটি হতে পারে।
যদিও ইউএস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় বলেছিল, ২০৬৪ সালে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা সর্বাধিক বৃদ্ধি পাবে। তবে সেটা কখনোই ১০০০ কোটি হবে না। এমনকি ২১০০ সালে ৮৮০ কোটিতে নেমে আসবে জনসংখ্যার পরিমাণ।
আইএইচএমই গবেষণার প্রধান লেখক স্টেইন এমিল ভলসেট এএফপিকে বলেন, যথাযথ কারণ থাকায় আমাদের গণনা সঠিক বলে মনে করছি।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের অধ্যাপক বলেন, জনসংখ্যার হার বেশি কম হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের গড় জনসংখ্যার হারের একটি প্রভাব রয়েছে। সেই হিসেবে জনসংখ্যা মাত্র নয় থেকে ১০০০ কোটির মধ্যে পৌঁছাবে।
প্রজনন হার হ্রাস
২০২১ সালে একেকজন নারী জীবদ্দশায় ২.৩ জন করে শিশুর জন্ম দিয়েছেন। যা ১৯৫০ সালে ছিল পাঁচটি।জাতিসংঘের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটি ২.১-এ নেমে আসবে।
রাচেল স্নো বলেন, আমরা বিশ্বের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে বেশিরভাগ দেশ ও এই বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এমন একটি দেশে বসবাস করছে যেটি প্রতিস্থাপনের উর্বরতার নিচে। সেখানে গড় প্রজননের হার ২.১ শিশু।
জনসংখ্যার হার কোথাও কোথাও অনিশ্চিত
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে গড় আয়ু বৃদ্ধিকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে সবশেষ গড় আয়ু দেখা গেছে ৭২.৮ বছর। যা ১৯৯০ সালের তুলনায় নয় বছর বেশি। ২০৫০ সালের মধ্যে গড় আয়ু ৭৭.২ বছর হতে পারে বলে ধারণা জাতিসংঘের।উর্বরতা হ্রাসের সাথে ৬৫ বছরের বেশি মানুষের অনুপাত ২০২২ সালে ১০% থেকে ২০৫০ সালে ১৬% এ উন্নীত হবে।
এই বৈশ্বিক ধূসরতা শ্রম বাজার ও জাতীয় পেনশন পদ্ধতির ওপর প্রভাব ফেলবে যখন অনেক বেশি বয়স্ক মানুষের বাস হবে এই পৃথিবীতে।স্নো বলেন, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশ তার জাতিসংঘের সাথে যোগাযোগ করে তাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়াতে করণীয় জানতে চাইছে।
গড় আয়ু বৈচিত্র
২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অর্ধেকের বেশি হবে মাত্র আটটি দেশ থেকে: গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং তানজানিয়া।
বিভিন্ন অঞ্চলে গড় বয়সও অর্থবহ। বর্তমানে ইউরোপে ৪১.৭ বয়সী নাগরিক বেশি আর সাব-সাহারান আফ্রিকায় ১৭.৬ বছর নাগরিক বেশি। স্নোর মতে, এমন ব্যবধান আগে কখনই ছিল না।
অতীতের বিপরীতে দেশগুলোর গড় বয়স বেশিরভাগই তরুণ ছিল। একইভাবে সামনেও আমরা বয়সের কাছাকাছি হতে পারি, তাদের বেশিরভাগই হবেন বৃদ্ধ।কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, এই আঞ্চলিক জনসংখ্যাগত পার্থক্য ভৌগলিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
চীনকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত
পরিবর্তনশীল প্রবণতার আরেকটি দৃষ্টান্তে দুটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ চীন ও ভারত। জাতিসংঘের মতে, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে মঞ্চে জনসংখ্যায় একে অপরকে পাল্লা দেবে এই দুই দেশ।
চীনের ১০৪ কোটি জনসংখ্যা শেষ পর্যন্ত হ্রাস পেতে শুরু করবে। যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩০ কোটিতে নেমে আসবে।শতাব্দীর শেষ নাগাদ চীনা জনসংখ্যা মাত্র ৮০০ কোটিতে নেমে যেতে পারে।
ভারতের জনসংখ্যা বর্তমানে চীনের তুলনায় ঠিক নিচে। ২০২৩ সালে তার উত্তর প্রতিবেশীকে ছাড়িয়ে যাবে ও ২০৫০ সালের মধ্যে ১৭০ কোটি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।ইউনাইটেড স্টেটস ২০৫০ সালে তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ থাকবে।তবে এটি নাইজেরিয়ার সাথে ৩৭৫ কোটিতে আবদ্ধ হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত