গাজায় ইসরাইলের ভয়াবহ আগ্রাসন, প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে মৃত্যু
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২১, ১০:০০ | আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩
টানা পঞ্চম দিনের মতো ফিলিস্তিনের গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। আজ শুক্রবার সীমান্ত এলাকা থেকে গাজায় আর্টিলারি শেলও নিক্ষেপ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে জানানো হয়, এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলের হামলায় ১২২ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩১টি শিশু রয়েছে। এ ছাড়া গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের এ হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৯০০ জন।
ইসরাইলের নিক্ষেপ করা আর্টিলারি শেল দায়ির আল-বালাহ ও মাগাজির পূর্বাঞ্চলের বেসামরিক মানুষের বাড়ির ওপর পড়ছে। প্রাণ বাঁচাতে ফিলিস্তিনের শত শত পরিবার গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে।
শুক্রবার ভোরে ইসরাইলের আশকেলন শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস। ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত এক সৈন্যসহ মোট সাত ইসরাইলি ও একজন ভারতীয় নিহত হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ লেবাননের একটি এলাকা থেকে ইসরাইলে অন্তত তিনটি রকেট ছোঁড়া হয়েছে।
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রামুন বিমানবন্দরে ‘আইয়াশ-২৫০’ নামের ‘দূরপাল্লার’ রকেট হামলাও চালিয়েছে হামাস। সংগঠনটির সামরিক শাখা ইজ্যাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের রামুন বিমানবন্দরে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এটি ২৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম।’ তবে এ হামলা ঠিক কখন চালানো হয়েছে এবং এতে হতাহতের খবর জানা যায়নি।
অন্যদিকে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ও সিনাগগে আগুন দেয় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা। কোথাও কোথাও ফিলিস্তিনিদের দোকান-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতারেসসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো অনতিবিলম্বে এই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাতে সাড়া দেননি। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েলে শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য যতদিন প্রয়োজন, ততদিন হামলা অব্যাহত থাকবে।’
এমন পরিস্থিতিতে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি দৃঢ়ভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমি যুদ্ধবিরতি ও সংলাপের জন্য দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই। আমি শান্ত অবস্থা ও শান্তির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা বন্ধের বিষয় নিয়ে আগামী রোববার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে আজ শুক্রবার নির্ধারিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকটি আয়োজনে সম্মতি জানিয়ে পরবর্তী সপ্তাহের শুরুতে করার প্রস্তাব দেয়। তিউনিসিয়া, নরওয়ে ও চীনের অনুরোধে আয়োজিত এই বৈঠকটি রোববার অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক কার্যক্রমের জন্য আরও সময় চেয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন শুক্রবারের অধিবেশন পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বাধা দিচ্ছে না, তবে বৈঠকের জন্য সময় প্রয়োজন। ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘে উন্মুক্ত ও ফলপ্রসূ আলোচনায় সমর্থন করছি।’
রোববার বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত হওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহের শুরুতে বৈঠকের অপেক্ষা করছি, এতে আমি আশা করছি কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য কিছু সময় পাব।’ এ ছাড়া সংঘাত বন্ধে সমঝোতা করতে মিসরের একটি দল ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব পৌঁছেছে।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দর বেন গুরিওন। সেখানকার সব ফ্লাইট রামন বিমানবন্দরে সরিয়ে নিয়েছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বৃহস্পতিবার ওই বিমানবন্দরেও আঘাত হেনেছে ফিলিস্তিনিদের ছুড়া রকেট।
ক্রমবর্ধমান এই হামলা-পাল্টা হামলার জেরে তেল আবিবের সঙ্গে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউরোপীয় এয়ারলাইনগুলো। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ভার্জিন আটলান্টিক, জার্মানির লুফথানসা, স্পেনের আইবেরিয়া, ডেল্টা এয়ারলাইনস, আমেরিকান এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস। এসব এয়ারলাইনস চলমান সহিংসতার কারণে ইসরাইলে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এদিকে সংঘাতের কারণে ইসরাইল ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে চলমান পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত