কোটি টাকার ফি লুট, শাস্তির মুখে মিটফোর্ডের ৫ কর্তা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৫ |  আপডেট  : ১ মে ২০২৪, ১৩:০৪

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল ২০২২ সালের ১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা ও বিভিন্ন পরীক্ষার ফি বাবদ ৩০ লাখ ৭২ হাজার ৪৮ টাকা আদায় করে। নিয়ম অনুযায়ী তা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক (ক্যাশিয়ার) মো. আব্দুছ ছাত্তার মিয়া ইউজার ফি জমাও দেন। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রেজারি চালানে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ এক হাজার ৪৪৮ টাকা। অর্থাৎ তিনি ৭০ হাজার ৬০০ টাকা কম জমা দেন। অভিনব এ কৌশলে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ততদিনে সরকারি দুই কোটি ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪১ টাকা বেহাত হয়ে গেছে। ১১টি ট্রেজারি চালানে একই কৌশলে অর্থ আত্মসাৎ করেন ছাত্তার মিয়া। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা ও চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চার্জশিটে একমাত্র আসামি করা হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. আব্দুছ ছাত্তার মিয়াকে। পাঁচ মাস ধরে আত্মসাতের এমন ঘটনা ঘটলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর কি কোনো দায় ছিল না— এমন প্রশ্ন ছিল সংশ্লিষ্টদের মনে। অবশেষে আদালতে চার্জশিট দাখিলের  পাশাপাশি এবার সংশ্লিষ্ট পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে দুদক। কর্মকর্তারা হলেন- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব, সহকারী পরিচালক ডা. মো. মফিজুর রহমান, হিসাবরক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জাহেদুর রহিম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন ও প্রধান সহকারী মো. আব্দুর রহিম ভূঁইয়া।

গত ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে দেওয়া চিঠিতে যথাযথভাবে তদারকি না করে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করার পর ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলা ও চার্জশিটে একমাত্র আসামি আব্দুছ ছাত্তার মিয়া। তবে, তদন্তে আমরা ওই দপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। সরকারি কোষাগারে জমার আগে এ সংক্রান্ত নথি হিসাবরক্ষক থেকে উপ-পরিচালক পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যাচাই-বাছাই হওয়ার কথা। কিন্তু তারা সেখানে হয় সুবিধা নিয়েছেন কিংবা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। দালিলিকভাবে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব, সহকারী পরিচালক ডা. মো. মফিজুর রহমান, হিসাবরক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জাহেদুর রহিম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন ও প্রধান সহকারী মো. আব্দুর রহিম ভূঁইয়া সকলেই ইউজার ফি সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের বিষয়টি যথাযথভাবে তদারকি না করে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার বিষয়টি তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা- ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর শামিল। এ কারণে উক্ত কার্যকলাপের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দুদক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর চিকিৎসাসেবা ও বিভিন্ন পরীক্ষার আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আব্দুছ ছাত্তার মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনিই মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা। আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত