বছরের পড় বছর ধরে চলছে গজারী বন ধ্বংশের প্রক্রিয়া

কার দেয়া আগুনে পুড়ছে শ্রীপুরে ভাওয়ালের গজারিবন জানেনা কর্মকর্তা

  টি.আই সানি,গাজীপুর প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ১৯:১১ |  আপডেট  : ১৬ মে ২০২৪, ১০:০১

দিনের পর দিন পড়েই যাচ্ছে গজারির বন,কিন্তু কার দেয়া আগুনে পুড়ছে এই গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়ালেরগড়,কে বা কাহারা রাতে বা নিদের কোন এক সময় গাজীপু বনের ভেতরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি বন বিভাগের কর্মকর্তার কেউই জানেনা বলে জানান। তবে এইবষয়ে বন কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথাও নেই।

গাজীপুরের শ্রীপুরে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে পুড়ছে ঢাকার অক্সিজেন খ্যাত ভাওয়ালের বন। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বনের হাজার হাজার গাছ।  একই সাথে পুড়ছে পোকা মাকর,লতা গুল্ম এবং সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী । আগুনের তাপে ঝলশে যাচ্ছে উঁচু গাছের ঢাল পাতা। গত এক সপ্তাহ ধরে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন স্থানে  বনে আগুন দিচ্ছে। বনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বিন্দুবাড়ি,রাথুরা,পটকা,সাইটালিয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে।

জানাযায়, প্রতি বছরই এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত ভাওয়ালের বনে আগুন দিয়ে থাকে। ফালগুন- চৈত্র মাসে গজারী গাছের পাতা ঝড়ে যায়। পাতার স্তুপে দেয়া হয় আগুন।  আগুনে পোড়ে যায় বনের লতা পাতা,কপিচ বন। ঝলসে যায় উঁচু গাছের ঢাল পাতা। আগুনে পোড়ার ফলে শুকিয়ে যায় বনের গজারীর কপিচ। প্রতিবছরই নতুন করে গজানো কপিচ গুলো ২-৩ ফুট উঁচু হয়ে উঠে। আবার পোড়ানো হয়।  ফলে নতুন করে গজারী গাছ জন্মাতে পারে না। পুড়ে যাওয়া শুকনো কপিচ গুলো দূর্বৃত্তরা লাকড়ী হিসেবে কেটে নেয়।

এভাবে বছরের পড় বছর ধরে চলছে গজারী বন ধ্বংশের প্রক্রিয়া। আগুনে বনে থাকা পোকা মাকড়, কীট পতঙ্গ পুড়ে যায়। এছাড়া মরে যায় বনের উরবরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক কেচু। নষ্ট হয়ে যায় পশু পাখির আবাস স্থল। বনের ভেতরের ঝড়া পাতা পোড়ে ফেলায় বনের মাটির  উরবরতা হ্রাস পাচ্ছে। মাটির উপরের স্তর  পোড়ে যাওয়ায়  গজাতে পারেনা নতুন গজারী কপিচ, লতা,গুল্ম।

একসময় ভাওয়ালের বনে থাকতো বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি যেমন, শিয়াল, বানর, হনুমান, সজারু, বন মোরগ, বেজী, খেকশিয়াল, টিয়া, ময়না, ঘুঘু, শালিক,বক,বাবুই,সহ বিভিন্ন পশু পাখি। বনের গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং বনাঞ্চলে লোক বসতী বেড়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে পশুপাখির আবাস স্থল। ফলে ভাওয়ালের বনের বন্য প্রাণী এখন আর চোখে পড়ে না।

দূর্বৃত্তরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বনে আগুন দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছরই এভাবে ফালগুন-চৈত্র মাসে গজারী পাত ঝড়লে বনে আগুন দেয়া হয়। বন পুড়ানোর জন্য কোন আইন গত ব্যবস্থা না নেয়ায় ও বন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বছরের পর বছর ধরে চলছে  বন পোড়ানোর অপকর্ম।

পরিবেশ কর্মী এবং নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন,আমাদের গাজীপুরে বন ধ্বংসের অন্যতম প্রধান  কারণ হচ্ছে বনে আগুন দেয়া।বনে আগুন দেয়ার কারণে প্রাকৃতিক যে জীব বৈচিত্র্য তা নষ্ট হচ্ছে। বনের ভেতর বসবাসকারী সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী গুলো আগুন দেয়ার কারণে মারা যাচ্ছে। গাজীপুরের এই বন গুলো হচ্ছে ঢাকার অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি। এভাবে বনে আগুন দেয়ার ফলে বন ধ্বংস হচ্ছে। এই বনকে বাচাতে সকল শ্রেণী এবং  পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। রক্ষা করতে হবে ঢাকার অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি খ্যাত এই বনকে।

তিনি আরো বলেন, কোন কোন জায়গায় বন দখলের জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে নিজেদের প্রয়োজনে বনে আগুন লাগানো হয়। বন ধ্বংস করে শিল্পায়ন হচ্ছে যা আমাদের কাম্য নয়। শিল্পায়ন প্রয়োজন আছে তবে বন ধ্বংস করে নয়।গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী এই বনকে বাচানোর জন্য তিনি বন কর্মকর্তা, পরিবেশ কর্মী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল ব্যাক্তিকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

কবি সাহিত্যিক ও পরিবেশবিদ শাহান সাহাবুদ্দিন বলেন,শিল্পায়নের ফলে গাজীপুর বনভূমির যেহেতু আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের এখানে যারা শিল্পায়ন করছেন বা করে আসছেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ভূমিদস্যু পনাই জড়িত রয়েছেন। এবং বন বিভাগের বিপথগামী কর্মকর্তারাও রয়েছেন এদের যোগসাজশে। পরিকল্পিতভাবে কখনো কখনো আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। যেন তাদের মত করে গাছ ধ্বংসযজ্ঞ করে ভূমি দখল নেওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, ভাওয়াল বনে ভূমিদস্যুরা যখন আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে তখন বন বিভাগের অসৎ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে প্রতিরোধ না করে পর্যবেক্ষণ করেন। এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ভাওয়ালগড় বাঁচাও আন্দোলন সহ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার যে বিট অফিস গুলো আছে এদেরকে সোচ্চার হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

এব্যাপরে শ্রীপুর  রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা মীর মো. বজলুর রহমান বলেন, আগুন লাগার খবর পেলেই তাৎক্ষনিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয়। ইতিমধ্যে এলাকায় শব্দ যন্ত্রের মাধ্যমে মাইকিং করে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। কারা আগুন লাগাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত