কারাবন্দী জীবন ও কালজয়ী লেখা
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১১:৪১ | আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৭
আজ আন্তর্জাতিক কারাবন্দি লেখক দিবস। পৃথিবীতে অনেক লেখক লেখনিতে সমাজের অনিয়ম কুপমন্ডুকতাকে লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যা অনেক উচ্চশ্রেণির বা শাসকগোষ্ঠীর জন্য ফাদ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সেইসব লেখকদের দমিয়ে রাখতে তারা তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। সত্য কখনো চাপা থাকেনা। সময় বাদলায়, মানুষ বদলায়, দেরিতে হলেও অতীতের করে আসা ভুল থেকে মানুষ শিখে। লেখা গুলো যখন প্রকাশিত হয় তখন মানুষ বুঝতে পারে তা কালজয়ী ছিল। কিন্তু লেখার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। তবে যুগে যুগে এই ভুলগুলো হয়েই থাকবে, বর্তমানে যা লেখা হচ্ছে হয়তো কোন একদিন তা প্রকাশ পাবে। যা সমাজের রক্তচক্ষুর আড়ালে ঢাকা পরে আছে।
আবার অনেক লেখা আছে যা কারাগারে বসেই লেখা হয়। কারাগারের কঠিন জীবন সেই লেখাকে আরো কঠিন করে তোলে। মানুষের জীবনের নির্মম বাস্তবতা ফুটে উঠে।
উপমহাদেশে এই ঘটনার উদাহরন কম নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি লিখিত দলিলের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করেছিলেন। নজরুল তাঁর ‘রুদ্রমঙ্গল’ (১৯২৬)-এ প্রকাশিত ধূমকেতুর পথ রচনায় লিখেছেন, “একটি মাত্র টুকরো ভারতীয় ভূমিও বিদেশীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। ভারতীয়দের পরিচালনার দায়িত্ব ভারতীয়দের হাতে থাকবে। এ বিষয়ে কোনও বিদেশির অধিকার নেই আমাদের নির্দেশ করার। যারা ভারতের রাজা বা স্বৈরশাসক হয়েছে এবং এই ভূমিকে শ্মশানে পরিণত করেছে, তাদের তল্পি-তল্পাসহ সাগর পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ”
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার শেষ লেখা দেয়াল নিয়ে নানান সংশয়ে ছিলেন। তিনি বহুদিন যাবত বইটি লিখে গেছেন কিন্তু প্রকাশ করেননি কারণ রাজনৈতিক সত্য ঘটনা প্রকাশ করার নানান জটিলতা রয়েছে। ১৯৭৫সালের পটভূমিতে এই লেখা ছিল। সেই সময়ের অনেক ঘটনার সাক্ষী ছিল মানুষ, সব যুগেই কিছু ঘটনা রাজনৈতিক স্বার্থে গোপন থাকে। তাই তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই লেখা প্রকাশ করেননি। তবে প্রকাশের আগে অনেক বিষয় ছাটাই করা হয়েছে।
কারাবন্দি লেখকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও উল্লেখযোগ্য। তিনি দুই দফায় কারাগারে বন্দি অবস্থায় কাগজে কলমে তার চিন দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং কারাগারের প্রতিদিনকার কথা ও নিজের আত্মজীবনী লিখেন। তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাকে কাগজ কলম দিয়ে এবং উতসাহ দিয়ে থাকতেন। ২০১৮ সালে তাদের দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা পুরোন জীর্ণ অবস্থাউ কাগজগুলো খুজে পান। অনেক লেখা নষ্ট হয়ে গেছিল, তারা দুই বোন লেখা পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেক স্মৃতি মাথাচারা দিয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি তিনটি বই প্রকাশ করে থাকে। কারাগারে রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং আমার দেখা নয়াচিন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত