কারবালার শিক্ষা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২১, ০৯:০৯ |  আপডেট  : ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭

আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্যতম হত্যাকান্ডের দিন। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে দিনটি অত্যন্ত শোকাবহ এবং যাতনার। ৬১ হিজরী সনের এ দিনে (১০ অক্টোবর, ৬৮০ খৃ.) কারবালা প্রান্তরে অত্যন্ত বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কনিষ্ঠ দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-কে। তারপর থেকে প্রতি বছর ১০ মহররম মুসলমানদের কাছে এক বেদনাবিধুর দিন। বাংলাদেশ প্রতি বছর এ দিনটি যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য সহকারে উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে দৈনিক পত্রিকাগুলো সম্পাদকীয় ও বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বেতার ও টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে।

সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) প্রতিবাদী হয়েছিলেন দুঃশাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে। নবীজির সাহাবা হযরত মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের চরিত্রের মধ্যে মুসলমানিত্বের কোনো চিহ্নই ছিল না। মদ নারী নিয়ে ফুর্তিতে মজে থাকা ইয়াজিদ ইসলামি খেলাফতের উত্তারাধিকার হযরত ইমাম হাসান (রা.)কে কূটকৌশলে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। এরপর হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-কে টার্গেট করে। নানা বিষয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে পথের কাঁটা দূর করতে ইয়াজিদ হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সমঝোতার কথা বলে তাকে আহ্বান জানায় দামেস্কে আসতে। সরল বিশ্বাসে হযরত ইমাম হোসেন মদীনা থেকে পরিবারের সদস্য ও স্বল্প সংখ্যক সঙ্গীসহ দামেস্কের উদ্ধেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্ত দামেস্কে আসার আগেই কারবালা ময়দানে তিনি ঘেরাও হন ইয়াইজদ বাহিনীর দ্বারা। ইমামকে ইয়াজিদের বশ্যতা স্বীকারের আহ্বান জানানো হয়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইয়াজিদ বাহনী কারবালা ময়দান সংলগ্ন ফোরাত নদীর তীরে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। ফলে ইমামের শিবিরে পানি সংকট দেখা দেয়। ক্ষুৎপিপাসায় কাতর ইমামসঙ্গীরা একেএকে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হতে থাকেন। এ পর্যায়ে ইমাম হোসাইন নিজেই যুদ্ধ অবতীর্ণ হন। তাঁর বীরত্বের কাছে টিকতে পারেনা ইয়াজিদ বাহিনী। অবরোধমুক্ত হয় ফোরাতকূল। কিন্তু স্বজনহারা হোসাইন সে পানি পান করতে পারেন না। যুদ্ধক্লান্ত ইমামকে সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে ইয়াজিদের সেনাধ্যক্ষ সীমার। দেহ থেকে তাঁর মস্তক বিচ্ছিন্ন করে তা উপহার দেয়া হয় ইয়াজিদের দরবারে। 

আজ থেকে ১হাজার ৩৮২ বছর আগে সংঘটিত সেই নৃশংস ঘটনা এখনও মানুষকে কাঁদায়। নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে আছে ইয়াজিদ ও সীমার নাম দুটি। অসত্য আর অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে ইমাম হোসাইন হয়েছেন সত্যের পথে আত্মোৎসর্গের উদাহরণ। আর ইয়াজিদ-সীমার পরিণত হয়েছে ঘৃণিত দুটি নামে। যতদিন এ পৃথিবী থাকবে মানুষ ওদের নাম ঘৃণাভরেই উচ্চারণ করবে।

মানুষ হিসেবে আমাদের অন্যতম কর্তব্য সত্য ও ন্যায়ের জন্য লড়াই করা। অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে শির উঁচিয়ে প্রতিবাদ করাই বীরের ধর্ম। আজকের সমাজে যেসব অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, অমানবিক ঘটনা ঘটেছে, তা অনেকাংশ সংঘটিত হতে পারছে আমাদের নির্বিকারত্বের কারেণে। আমরা প্রতিবাদী হই না বলেই দুর্বৃত্ত-দুস্কৃতকারীরা সমাজে দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে চলতে পারছে। সমাজকে অন্যায়-অবিচার-অনাচার মুক্ত করতে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করা আমাদের কর্তব্য। ইমাম হোসাইন(রা.) এক্ষেত্র আমাদের দিশারী। আর এটাই কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনার মূল শিক্ষা। 

আমরা সত্য ও ন্যায়ের পথে কারবালা প্রান্তরে আত্মদানকরী সব শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত