কাউনিয়ায় হতাশ মৎস্যজীবীরা, তিস্তা নদীতে নতুন পানি হলেও মিলছেনা মাছ

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১৮:০২ |  আপডেট  : ৩১ মে ২০২৫, ০০:০৫

মৎস্য বিভাগের উদাসিনতায় রংপুরের মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত কাউনিয়ায় তিস্তা নদীতে পানি বাড়লেও রিং জালের প্রভাবে মিলছে না মাছ, হতাশ উপজেলার মৎস্যজীবীরা। দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদীর বৈরাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশী সুস্বাদু মাছ।

সরেজমিনে তিস্তা নদী এলাকা ঘুরে জানাগেছে, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, ব্যাটারি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে মাছ নিধন, কারেন্ট ও রিং জালের অবাধ ব্যবহার, কিটনাশকের ব্যবহার, নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাধঁ নির্মাণ, নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, মা মাছের আবাস স্থলের অভাব ও প্রজননে ব্যঘাতের কারণে তিস্তা নদীর বৈরালি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। রংপুরের রুপালি মাছ হিসেবে পরিচিত বৈরালি তিস্তা নদীতে ব্যপক হারে পাওয়া যেত। বৈরালি মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় বিক্রিহতো। 

বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু মাছটি। ইলিশ মাছ রক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বৈরালি মাছ রক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধিতে কাউনিয়ায় কোনো উদ্যোগ নেই। নদীতে জাল ফেলে কয়েকবার টেনেও আশানুরূপ মাছ মিলছে না। যেটুকু পাওয়া যায় তা বিক্রি করে সংসার চলছেনা মৎস্য জীবীদের। তিস্তায় জাল টেনে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন কিছু জেলে তারা জানান, নদীতে পানি হলেও মাছ নেই। চায়না দুয়ারী রিং জাল দিয়ে পোনা শিকার, অভয়াশ্রম না থাকায় ও মা মাছ শিকারের ফলে বিলুপ্তির পথে বৈরালি মাছ। নদীর দেশি প্রজাতি অন্য মাছের সংখ্যাও কমে গেছে। হারিয়ে গেছে বিভিন্ন জলজ প্রাণী। তিস্তাপাড়ের জেলে কাদের বলেন, আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। বর্ষা শুরুর আগে কিছু পানি এসেছে। এই পানিতে কয়েকবার জাল টেনেও আশানুরূপ মাছ মিলছে না। কয়েকজনে মিলে সারাদিন জাল টেনে যে মাছ পাই তা বিক্রি করে চাল, ডাল, কিনে পকেটে টাকা থাকে না। মৎস্যজীবী শোরেন চন্দ্র বলেন, একসময় এ নদীতে ইলিশ মাছ ধরেছি, এখন তা শুধুই স্বপ্ন। বৈরালি মাছের চাহিদা থাকলেও নদীতে তেমন মিলছে না। কান্তেরশ^র মাঝি জানান, তিস্তায় পানি আসায় বৈরালি মাছ ধরছি। কিন্তু কিছু জেলে ব্যাটারির সাহায্যে কারেন্ট তৈরি করে মাছ ধরায় বড় মাছ ধরা পড়লেও পোনা একেবারেই নিধন হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন নজরদারী নেই। মাছ ক্রেতা নুর আমিন জানান, স্বাদের মাছ বৈরালি চাহিদার তুলনায় আমদানী কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বি। অনেকে বলেছেন কর্তৃপক্ষের নজদারী না থাকায় নদী থেকে মাছ উৎপাদন না হওয়ায় বাজারে মাছ উঠছে না। পাঞ্জরভাঙ্গা গ্রামের শাহআলম জানান আগে গ্রামের মানুষ তিস্তা নদীর মাছ দিয়ে চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে সংরক্ষন করতো আবার কেউ করতো সিদল। মাছ ব্যবসাী ভোলারাম দাস বলেন, আগের মতো এখন তিস্তার মাছ পাওয়া যায় না, খুব কঠিন অবস্থায় আছি। তিস্তায় একসময় বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যেত। দিনেদিনে তিস্তা থেকে বৈরালি, ভাগনা, বাইম, বোয়াল, আইড় হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের ব্যবসাও কমে গেছে। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, তিস্ত নদীতে সুস্বাদু বৈরালি মাছ পাওয়া যায়। প্রতিবছর নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ কমে যাচ্ছে। বৈরালি মাছরক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এ মাছের চাহিদা ব্যাপক। ইতোমধ্যে আমরা ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করে বেশ রিং জাল আটক করে তা ধ্বংস করেছি, ব্যাটারি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে মাছ নিধনের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত