তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী

কাউনিয়ায় নদীতে পানি নেই হেঁটেই নদী পাড়ি দিচ্ছে পথচারীরা

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:২১ |  আপডেট  : ১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫৫

তিস্তা নদীর সাথে মিশে আছে ভারত ও বাংলাদেশের বিশাল অ ল। নদীটি সিকিমের হিমালয়ের ৭ হাজার ২০০ মিটার সুউচ্চ চিতামু হ্রদ থেকে উৎপত্তি। এই নদী দার্জিলিং এ শিভক গোলা নামক একটি গিরিসস্কটের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। এরপর জলপাইগুড়ি পেরিয়ে নিলফামারীর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ১২৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়নে তিস্তা নদীর চরা ল ঘুরে দেখা গেছে, পায়ে হেঁটেই তিস্তা নদীপাড়ি দিচ্ছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। নদীতে পানি সল্পতায় নৌকা না চলায় চরে উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য বাজারে আনতে বহু কষ্ট করে ঘারে করে নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। বাজারহাটের বুড়িরহাট ও শরিসাবাড়ি থেকে পায়ে হেঁটেই বেশির ভাগ মানুষ নদী পাড়ি দিচ্ছে। ঘারে করে আলী নিয়ে আসা আবেদ আলী জানান, নদীতে এখন কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আরো কম। নদীর একাধিক পথ তৈরি হয়েছে। কোথাও হেঁটেই যাওয়া যায় আবার কোথাও সামান্য একটু নদী নৌকা দিয়ে পার হতে হয়।

স্থাানীয় আসাদুজ্জামান জানান তিস্তায় পানি চুক্তির বাস্তবায়ন নেই। এক সময়ের খর¯্রােতা তিস্তা নদীতে এখন হাঁটু পানি। কিছুদিন আগেও নৌকা যোগে নদী পাড়ি দিতে হয়েছে। এখন পানি না থাকায় পায়ে হেঁটেই পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। বর্তমানে নদীটি পানি সংকটে আজ মৃত প্রায়। চিরযৌবনা প্রমত্তা তিস্তা ক্রমাগত প্রবীণ হয়ে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। নদীর বুক জুড়ে খরস্রোতা জলেরস্রোত আর নেই। বর্ষা শেষ হলে পানি শুকিয়ে মরুভুমিতে পরিনত হয় তিস্তা নদী। ঢেউহীন তিস্তার বুকে জেগে উঠে অসংখ্য বালুচর। তিস্তাপাড়ে নেই আগের মত মাঝি মাল্লাদের ডাকহাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার কর্ম ব্যস্থতা। সব মিলে তিস্তাপাড়ের জীবন জীবিকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছে নিরাশার বালুচরে। নিজপাড়া গ্রামের জেলে সত্যবাবু বলেন, আগে তিস্তা নদীতে দিনভর মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। এখন নিজের খাবার মাছ টুকুও নেই। পানি শুন্য তিস্তায় মাছের আকাল পড়েছে। মাছ না থাকায় অনেক জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা রয়েছেন তাদেরও সংসার চলে অনাহারে অর্ধহারে। প্রতিদিনেই পানি কমতে কমতে নদী শুকিয়ে এখন আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী তার।

তিস্তা চরাঞ্চল ঢুসমারা চর গ্রামের কৃষক কোব্বাত আলী বলেন, বর্ষাকালে পানির প্রয়োজন নেই। তখন ব্যাপক হারে পানি ছেড়ে ভারত আমাদের ফসল ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। আবার শুস্ক মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন তখন পানি পাই না। চাষিরা এখন বিকল্প উপায় হিসেবে নদীতে শ্যালো-মেশিন বসিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। যৌবনে দুপাড় ছাপিয়ে দাপিয়ে চলা তিস্তা নদী পৌষে শুকিয়ে যাওয়ায় পায়ে হেঁটেই তিস্তা নদী পাড়ি দিচ্ছে পথচারীরা। বর্ষাকালে বন্যা আর নদী ভাঙ্গগনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভাঙ্গনে ও প্রবল ¯্রােতে ভেসে যায় ফসলি জমি বসতভিটাসহ সকল স্থাপনা। বর্ষা শেষ হলে পানি শুকিয়ে মরুভুমিতে পরিনত হয় তিস্তা নদী। খেয়া ঘাটের মাঝি রফিকুল জানান, মুল নদীতে হাটুর নিচে পানি। যা পায়ে হেঁটেই পাড় হওয়া যায়। বাকী পুরো তিস্তা নদী ধু ধু বালু চর। ফলে নৌকা চালানোর মত পানি নেই এখন। সামান্য হাটু পানি সবাই পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি। গদাই চরের কৃষক আলামিন বলেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরে এখন বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। চরের পলি ও দো-আঁশ মাটিতে চাষাবাদ হচ্ছে পিঁয়াজ, রসুন, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা ও গমসহ নানা জাতের ফসল। তবে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বোরো চাষিরা বিপাকে রয়েছেন সবচেয়ে বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকে না। ফলে কৃষকেরা বিপাকে পড়ছে। তবে তিস্তার জেগে ওঠা চরে কৃষি বিভাগ থেকে প্রনোদনার মাধ্যেমে কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হচ্ছে।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত