কাউনিয়ায় জীবন সংগ্রামী ৩ জয়িতা আবেদা, রুমা ও তাছলিমা

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১৯:৪৩ |  আপডেট  : ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:০০

 রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় বিভিন্ন প্রতিকুলাতার সাথে লড়াই করে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়া সফল তিনি জয়ীতা আবেদা বেগম, রুমা রানী ও তাছলিমা ইয়াসমিন। তুমি নারী, তুমি বন্ধু, তুমি মা, তুমি আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেনণা।

সফল জননী আবেদা বেগম ঃ সফল একজন জননী আবেদা বেগম। বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের দিন মজুর মোঃ আজিজুল ইসলামের স্ত্রী সে। সৎ মায়ের সংসারে নিদারুণ কষ্ট সয্য করে প্রায় দেড়যুগ আগে আবেদা বেগমের বিয়ে হয় একজন দরিদ্র দিনমজুরের সাথে। একে একে জন্ম নেয় ৪ কন্যা সন্তান। পর পর ৪ কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ায় তাঁর স্বামী আরেক মহিলা কে বিয়ে করে নতুন করে সংসার জীবন শুরু করে। আবেদার লেখাপড়া না থাকলেও তিনি মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেছেন সব সময়। তিনি স্থানীয় চিপস্ কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে বড় মেয়েকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্সে পড়াচ্ছেন মেজ মেয়ে ইসলামের ইতিহাসে অনার্সে পড়ছে। সেজ মেয়ে এইচএসসি ভোকেশনালে পড়াশোনা করছে এবং ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে, পাশাপাশি মেয়েরা টুপি সেলাইয়ের কাজ করে কিছুটা আয় করে পড়াশোনার অর্থ যোগান দিচ্ছেন। মেয়েরা পড়ালেখা শেষ করে যেন চাকুরী করে স্বাবলম্বী হতে পারে সে আশা তার। স্বামীও তার ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ফিরে এসেছে। একজন সফল জননী হিসেবে পাড়া প্রতিবেশিরাও তাকে সন্মানের চোখে দেখেন। এতে আবেদা বেগম গর্ববোধ করেন।

অর্থ নৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী রুমা রানী ঃ কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবশায়ের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে উদোক্তা হিসেবে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে ভাগ্যের যে পরিবর্তন করা যায় তার জলন্ত উদাহরণ কাউনিয়ার টেপামধুপুর ইউনিয়নের নিলাম খরিদা সদরা গ্রামের মংলা চন্দ্র বর্মনের কন্যা রুমা রানী। দরিদ্র পিতার অভাবের সংসারে জন্ম নেয়া রুমা রানী আইজিএস প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহিলা বিষয়ক অফিস ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে বিউটিপার্লার দিয়ে রোজকার করে মাস্টার্সে পড়শুনা করছে। পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা সহ ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছে। পাশাপাশি ব্র্যাকের একটি প্রজেক্টের আওতায় মেয়েদের বিউটিশিয়ানের কাজ শেখাচ্ছেন। মেয়েরা যেন কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারে এ বাসনা তাঁর। রুমা রানী এখন অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

স্বামী ও শাশুড়ীর নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু তাছলিমা ইয়াসমিন ঃ স্বামী ও শাশুড়ীর নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করে তাছলিমা ইয়াসমিন। পল্লী উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন ও কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদোক্তা হিসেবে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। শহীদবাগ ইউনিয়নের চর সাব্দী গ্রামের মোহাম্মদ আলী মিয়ার স্ত্রী সে। ১০ বছর আগে স্বামী তাকে ভালবেসে বিয়ে করে। বিয়ের পর কিছুদিন সংসারে সুখের ছোঁয়া থাকলেও যৌতুকের টাকা দিতে না পাড়ায় স্বামী, শাশুড়ী, নদন, ভাসুর সবাই তাকে গালমন্দ করে। এরই মধ্যে স্বামী অন্য এক নারীর প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে। তাকে আদর ভালবাসার পরিবর্তে কারণে অকারণে নির্যাতন করত স্বামী। তাসলিমার দুই পুত্র সন্তানের জননী। বর্তমানে সন্তান দুটিকে কে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আছেন । নারীদের প্রশিক্ষন দিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সন্তানদের স্কুল পড়াচ্ছেন। কঠোর পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাছলিমা ইয়াসমিন। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত