কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ - ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৬ | আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৪৯
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ-প্রতিবাদে ফুঁসছে কলকাতা। বিভিন্ন হাসপাতালে চলছে কনিষ্ঠ ও আবাসিক চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য রাজ্যেও।
আন্দোলনকারীদের দাবি, ওই হত্যাকাণ্ড একজনকে দিয়ে সম্ভব নয়। এর পেছনে যারাই আছে, সবাইকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যত দিন অপরাধীদের ধরা না হচ্ছে, তত দিন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলবে।
কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছে আর জি করসহ কলকাতার এনআরএস, পিজি, কলকাতা মেডিকেল, বাঙ্গুর হাসপাতালসহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লির এইমস হাসপাতাল, মৌলানা আজাদ মেডিকেল কলেজ, লেডি হারডিং মেডিকেল কলেজ, সফদার জং হাসপাতাল, দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতাল, বাবা সাহেব আম্বেদকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের এইমস, মুম্বাই ও কর্ণাটকের বিভিন্ন হাসপাতালে। এসব হাসপাতালেও চলছে কর্মবিরতি। চিকিৎসকদের মুখে একটিই স্লোগান, ‘নো সেফটি, নো ডিউটি’।
কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছে আর জি করসহ কলকাতার এনআরএস, পিজি, কলকাতা মেডিকেল, বাঙ্গুর হাসপাতালসহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাছবি: ভাস্কর মুখার্জি এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সদস্য সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হলেও আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন, একজনের পক্ষে ওই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সে কথাই স্পষ্ট হয়েছে। তাই এর পেছনে জড়িত সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সোমবার ধর্ষণ ও হত্যার শিকার চিকিৎসকের কলকাতার সোদপুরের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন মা–বাবার সঙ্গে। সেখান থেকে মমতা বের হয়ে এসে জানান, আগামী রোববারের মধ্যে পুলিশ যদি এ ধর্ষণকাণ্ডের মূল হোতাদের শনাক্ত করতে না পারে, তবে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেবেন তিনি। তবে মমতার এ বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন ঘটনাটিতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের।
হত্যাকাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আজ মঙ্গলবারই মামলায় শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আন্দোলনকারীদের চাপে আর জি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করলেও রাজ্য সরকার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করেছে। এতেও ফুঁসে উঠেছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। দাবি তুলেছেন তাঁকে অবিলম্বে অপসারণের।
গতকাল কলকাতায় নাগরিক সমাজের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে অংশ নেন অভিনেতা কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, চৈতী ঘোষালসহ বিশিষ্টজনেরা। আজ বিকেলেও বিশিষ্টজনেরা শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড় থেকে মিছিল বের করবেন।
চলমান আন্দোলন-ক্ষোভের সূত্রপাত গত শুক্রবার ভোরে। আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় দায়িত্ব পালন শেষে বিশ্রাম নেওয়া এক পোস্টগ্র্যাজুয়েট পড়ুয়া চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া নিয়ে। সেদিন থেকেই জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকেরা ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ তুলে সোচ্চার হন। ডাক দেন কর্মবিরতির। দাবি তোলেন হত্যাকারীদের শাস্তির।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরে থাকতেন ওই নারী চিকিৎসক। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ওই চিকিৎসক এমবিবিএস শেষে আর জি কর মেডিকেল কলেজে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করছিলেন। ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেইনি চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দিবাগত রাত দুইটায় আরও চারজন চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে তিনি নৈশভোজ সারেন। এরপর চারতলার একটি কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন সকালে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ম্যাট্রেসে অর্ধনগ্ন অবস্থায় মৃতদেহ পড়ে ছিল।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত