করোনা আতঙ্ক ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বা নারী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১০:৫৮ |  আপডেট  : ৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫৩

বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটছে কোটি কোটি মানুষের। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে দেশের অন্তঃসত্ত্বা মা ও তাদের গর্ভের শিশুরা। চিকিত্সক, স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ রোগীদের সেবাদানে নিয়োজিত থাকায়, শিশুর জন্মের জন্য ধাত্রী ও দক্ষ লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। ফলে এই সময়ে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও গর্ভের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে বাংলাদেশেও প্রসূতি মা ও শিশুদের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুরাইয়া আক্তার করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে একবারও রুটিন চেকআপ করাতে চিকিত্সকের কাছে যান নাই। তিনি বলেন, ‘আমার শ্বাসকষ্ট আছে, তাই খুব আতঙ্কে আছি। তাছাড়া এ নিয়ে টেনশন করতে করতে আমি রীতিমতো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। জানি না বাকি তিন মাস সুস্থ থাকতে পারব কি-না।’

এদিকে রিফাত সুলতানা নামে এক মা ২৩ বছর বয়সে গর্ভধারণ করেছিলেন। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু প্রসবসময় যত ঘনিয়ে আসছিল কোভিড সংক্রমণের ভয়ে রিফাতের ততোই উত্কণ্ঠা বাড়ছিল। একপর্যায়ে আট মাস পর রিফাতের গর্ভের সন্তানটি গর্ভেই মারা যায়। চিকিত্সক বলেছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপেও এমনটা হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের কারণে গর্ভের শিশুদের নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা উত্কণ্ঠায় আছেন। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা যখন একটি নতুন জীবন আনার জন্য প্রস্তত হচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে মায়েরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। যেসব জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে বাড়িতে গিয়ে সন্তান জন্মকালীন সেবা প্রদানে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং জীবাণুমুক্ত বার্থ কিটসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। তবে আমরা সব ধরনের রোগীদেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, কোভিড-১৯ সংকট শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। উল্লেখ্য, ৬৩টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৩৩টিতে এখন সব ধরনের জরুরি গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতকের জীবনরক্ষাকারী রুটিন সেবাগুলো যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে অব্যাহত রাখা দরকার। অসুস্থ নবজাতকের জরুরি সেবা লাগবে। কারণ তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার জন্য সহায়তা এবং সুস্থ রাখতে ওষুধ, টিকা ও পুষ্টি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিসেফের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি রওশন আরা বেগম বলেন, এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিসেবা কমায় আরো অতিরিক্ত ৩৮ শতাংশ প্রসব হচ্ছে বাড়িতে। এতে মাতৃমৃত্যু এবং অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ছে। তবে করোনাকালে নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মাতৃস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সুপারিশে গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রথম তিন মাসে একবার ও শেষ তিন মাসের মধ্যে করোনা টেস্ট করা এবং কোনো মা হাসপাতালে গেলে ফিরিয়ে না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত